মার্গারেট এটউডের কাজ সাধারণত ফেমিনিস্টরা খুব গুরুত্বপূর্ণ আকারে দেখেন, তুলে ধরেন৷ প্রথমত, তার উপন্যাসে নারীর অবস্থান খুব শক্তিশালী। আবার এও সত্য তার উপন্যাসে পুরুষের অবস্থান আছে । এ বিষয়ে সুজি বাল্ডউইন ১৯৯৭ সালের এক ইন্টারভিউয়ে এটউডকে জিগাইলে, এটউড জবাব দেন, আমার উপন্যাস নারীবাদী কারণ এইটা যে সময়ে পাবলিশ হইছে, ১৯৭২ সালে, তখন যেকোন উপন্যাসে যদি কোন নারী চরিত্র থাকে তাইলে তো অইটা নারীবাদিই হইব! আমার উপন্যাসে নারী চরিত্র আছে, আবার পুরুষ চরিত্রও আছে। আপনি নারী চরিত্র বাদ দিয়া যেইভাবে কোন উপন্যাস লিখতে পারবেন না, তেমনি পুরুষ চরিত্র বাদ দিয়াও কোন উপন্যাস লিখতে পারবেন না। এটউড তার স্বভাবসুলভ নরম, মিষ্টি ভাষায় অবশ্য এই কথাগুলা বলতেছিলেন। তবুও মনে হইলো, হয়তো এটউড নিজেকে কোন নির্দিষ্ট জেন্ডারের ভিড়ে দেখতে চান নাই। এমনকি ফিমেইল রাইটস মুভমেন্ট যেই অর্থে ‘নারী’ ধারণাটারে সংজ্ঞায়িত করে, এটউড সম্ভবত সেইভাবে নারীকে দেখেন না। বরং জেন্ডার ধারণাটারে এটউড ক্রিটিকালি দেখার একটা আয়নাতে রাখতে পছন্দ করেন। ইন্টারভিউয়ের একটা জায়গায়, নারীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি, পুরুষালী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তিনি আপত্তি জানান। তার কাছে এই দুইটা ধারণাই ধোঁয়াটে কিংবা অস্পষ্ট। বরং ‘পয়েন্ট অফ ভিউ’ বা দৃষ্টিভঙ্গিরে একটা সেপারেট ধারণা হিসাবে বিবেচনা করলে কোন জেন্ডার যে এই ধারণাটারে নিজের রঙ মাখায়া নিতে পারে সেই সম্ভাবনার জন্যেই হয়তো পুরুষালী, নারীসুলভ কোন ব্যাপার এটউডের কাছে অর্থহীন। এইটা অনেকটা স্টেরিওটাইপড ধারণার বিরুদ্ধে, তার একটা অভিযান। কিন্তু প্রচলিত স্টেরিওটাইপের বিরোধিতার ক্ষেত্রেও এটউডকে ভিন্ন বলে মনে হয়। একটা জায়গায় তাকে প্রশ্ন করা হইছিলো, বাচ্চাজন্ম দেয়াতে বাধ্য করাকে আপনে কীভাবে দেখেন? তার কথা হইতেছে, যেকোন অধিকারের আন্দোলন আসলে খুব বেশি সময়নির্ভর, সিচুয়েশন নির্ভর। অনেকসময় মানুষই নির্ধারণ করে আমরা হয়তো ‘জন্ম দিতে বাধ্য করার’ যুগে আছি। আমরা যদি নিজেরাই জন্মদানের সিস্টেম বন্ধ কইরা দিই, জন্ম তখন বাধ্য হইয়াই দিতে হবে। এটাকে যেমন একজন শিশুর জন্যে জন্মানোর অধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা যায়, অন্যভাবে বাধ্য কইরা জন্ম দেয়ার একটা ঘটনাও বলা যায়। অর্থাৎ শিশুরও তো জন্মাবার অধিকার আছে, সেই অধিকার মিটাবার জন্যে আমিও তো একজনরে জন্ম দিতে বাধ্য করতেই পারে। লেজিটিমেসির কথা এইখানে মুখ্য না। বরং একেকটা সিচুয়েশনাল ফোর্স, আমাদের কীভাবে বাধ্য করে নতুন ধারণার জন্ম দিতে অথবা নতুন ধারণার বিরোধিতা তৈরি করবার ‘খোঁচা’ দিতে পারে সেইটার দিকেই এটউড ইঙ্গিত করছিলেন। এই উদাহরণ টানা হইছে, এটউডের চিন্তাপ্রক্রিয়ার ভিন্নতা বুঝানোর লাইগা। এটউড ‘সহজ’ বলতেও সহজ বুঝান না, অন্যকিছু বুঝান, ‘সেক্স’ বলতেও সেক্স বুঝান না, অন্যকিছু বুঝান এবং যখন দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেইল পড়া হয়, লোকে যা ভাবে ‘ভবিষ্যতের বর্ণনা’, এটউড সম্ভবত তাও বুঝান না। এটউড ‘ভবিষ্যতের বর্ণনা’ করেন না বরং তিনি এমন একটা পৃথিবীর কথা ভাবেন, যেইখানে ‘সম্ভবত’ আমাদের বাস করতে হতে পারে। উমবের্তো একোর সেই কথা, ইন্টেলেকচুয়ালরা ভবিষ্যতের জন্যে কাজ করে— মার্গারেট এটউডও ভবিষ্যত নিয়া কাজ করছেন, বর্ণনা করতে আগান নাই। এইজন্যেই তিনি ইন্টেলেকচুয়াল, জ্যোতিষী নন। তিনি বরং আগ্রহী আমরা কিরকম ভবিষ্যতে থাকতে পারি সেই চিন্তায়। এইজন্য তিনি বর্তমানে টেকনোলজি নিয়া চরম উচ্ছ্বসিত। টেকনোলজির সম্ভাবনা নিয়া তার আগ্রহ বর্তমান সময়ে তার টুইট, কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায়। এই থেকে আরেকটা জিনিস প্রমাণিত হয়, তিনি কোন একটা ‘ভবিষ্যত’-এ আগ্রহী নন বরং তার সম্ভাবনা যেগুলা অনেকরকম হইতে পারে তাতে চোখে দিতে তার ইচ্ছা বেশি। ইন্টারভিউটাতেও এই এটউডকে আমরা বারবার পাবো— ভিন্ন ধারণা নিয়া, তার শৈশব নিয়া, তার অনেকগুলা প্যারালাল জীবন নিয়া, লেখালেখির তরিকা, জেন্ডারসহ বিভিন্ন দিক নিয়া এটউডের সংবেদনশীল আলোচনা। এটউডের কবিতার মতোও যা অনেক ইন্টারেস্টিং। তৌকির হোসেন
মার্গারেট অ্যাটউড উপন্যাস, কবিতা এবং সমালােচনামূলক রচনাসহ তিরিশটিরও বেশি গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর উপন্যাসগুলাের মধ্যে রয়েছে দ্য হ্যান্ডমেইড'স টেল, ক্যাটস আইদুটোই বুকার পুরস্কারের জন্যে শর্ট লিস্টভুক্ত হয়েছিল- দ্য রবার ব্রাইড এবং অতি সাম্প্রতিক অ্যালিয়াস গ্রেইস, এটিও বুকার পুরস্কারের জন্যে শর্ট লিস্টের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং ক্যানাডায় গিলার প্রাইজ ও ইটালিতে গ্রিমিও মন্ডেলাে পুরস্কার অর্জন করেছে। তাঁর রচনা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে, অনূদিত হয়েছে তেত্রিশ ভাষায়। ব্রিটেইন, ইটালি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং নরওয়ের পাশাপাশি ক্যানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহু পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। মার্গারেট অ্যাটউড লেখক গ্রায়েম গিবসনের সঙ্গে টরােন্টোয় বাস করেন। দ্য ব্লাইন্ড অ্যাসাসিন (অন্ধ আততায়ী) তাঁর দশম উপন্যাস।