হররমায়েস্ত্রো, শ্লকমায়েস্ত্রো, মাস্টার অফ সাসপেন্স— স্টিফেন কিংয়ের মতে পাঠক আর সমালোচকেরা তারে এইসব ট্যাগ দিছে, যদিও একটামাত্র জনরাতে কখনো থামা হয় নাই তার। একবার ফ্লোরিডার এক সুপারমার্কেটে একজন বয়স্কা নারীর সাথে তার দেখা হইছিল। বয়স্কা তারে চিনতে পাইরা বলে, "আপনি তো স্টিফেন কিং, আপনি খালি ভুতের গল্প লেখেন। আরেকটু ভালো কিছু লিখতে পারেন না? ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ এর মত?" কিং উনারে বলেন যে শশাঙ্ক রিডেম্পশন তারই লেখা, কিন্তু বৃদ্ধা কিছুতেই বিশ্বাস করেন নাই। ধারণা করা হয়, এই একটা জনরাতে আটকায়া থাকা, টাইপড হওয়ার ফ্রাস্ট্রেশন ঝাড়ার জন্য উনি ‘মিজেরি’ লিখছিলেন। অবশ্য ইন্টারভিউতে তিনি টাইপড হওয়া নিয়া বিরক্তির ব্যাপারটা অস্বীকার করেন। ২০০১ আর ২০০৬ এই দুই বছরে দুই দফায় তার ইন্টারভিউ নেন ক্রিস্টোফার লেহম্যান-হপ্ট আর নাথানিয়েল রিচ। ইন্টারভিউতে তিনি তার লেখালেখির পরিবেশ, কেমনে প্লট ডেভেলপ করেন, প্লটের শাখাপ্রশাখা কেমনে গোছগাছ করেন— এইসব নিয়া বিস্তারিত আলাপ করছেন। প্ল্যান কইরা লেখালেখি ব্যাপারটা তার কাছে খুব ক্লিশে লাগে। চরিত্রগুলাকে কয়েকটা অদ্ভুত ‘হোয়াট ইফ’ সিচুয়েশনে ফালায়া, কাহিনী যেইদিকে যাইতে চায়, সেইদিকেই নিয়া যান। তার কাছে চরিত্রের আগে সিচুয়েশনটা গুরুত্বপূর্ণ। ‘অন রাইটিং’ বইয়ে বলছেন, উনি প্লটরে দুইটা কারণে বিশ্বাস করেন না। একটা হইলো, আমাদের জীবনেরই কোন প্লট নাই। এত সাবধান হইয়া, প্ল্যান-প্রোগ্রাম কইরাও আমরা যেমনে চাই তেমনে চলতে পারি না। আরেকটা কারণ হইলো, উনি বিশ্বাস করেন প্লট করা আর কোন কিছু স্বতঃস্ফূর্তভাবে বানানোর ব্যাপারটা খাপ খায় না- গল্প লেখার ক্ষেত্রে উনার বেসিক বিশ্বাস হইলো গল্প নিজে নিজেই তৈয়ার হয়। নিজের অভিজ্ঞতার সাথে কল্পনার মিশেল ঘটায়া একটা বেসিক প্লট বানায়ে সেইটা ডেভেলপ করাটা তার স্বকীয় একটা টেকনিক। কোন বইয়ের ‘দা এন্ড’ অর্থাৎ শেষটা লেখার ঠিক আগে কী হবে, এইটা উনি জানতে চান না। স্টিফেন কিংয়ের লেখাতে উনার ওইসময়ের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো চলে আসে। ১৯৭৪ সালে, ‘ক্যারি’ বের হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় স্টিফেন কিং এর মা জরায়ুর ক্যান্সারে মারা যান। মার মৃত্যুতে নিজেরে সামলাইতে গিয়া প্রচুর ড্রিংক করা শুরু করেন তিনি। এমনকি, মার ফিউনেরালে বক্তব্য রাখার সময়ে পাঁড় মাতাল ছিলেন। ‘কুজো’ বের হওয়ার পরে একদিন তার পরিবার আর বন্ধুবান্ধব মিলে তার অফিস থেকে পাওয়া বিয়ার ক্যান, সিগারেটের অংশবিশেষ, কোকেন, জ্যানাক্স, ভ্যালিয়াম, নাইকুইল, গাঁজা তার সামনেই কার্পেটে ঢাইলা দেয়। এরপরে তিনি সিগারেট বাদে সব ধরণের নেশা ছাইড়া দেন। তো সাতাশির দিকে উনি যখন ‘মিজেরি’ লিখতেছিলেন, ড্রাগ নিয়া বেশ স্ট্রাগল করতেছিলেন। ইন্টারভিউতে উনি কইছেন, আদতে নিজের নেশাটার একটা রূপ তিনি নার্স অ্যানির চরিত্রে দিছেন। নিরানব্বইয়ের দুর্ঘটনার পরে উনি যে প্রায়ই ব্যথা আর কষ্টে ভুগতেন, এই ব্যাপারটার প্রভাবও তার নভেলগুলোতে পড়ছে। স্টিফেন কিং সোশাল মিডিয়াতে বেশ সক্রিয়। রাজনৈতিক মতামত থেকে হালের পপ কালচার বিষয়ে তিনি প্রায়ই টুইট করতে থাকেন। তার হিউমার লেভেল সেরা। একবার কে জানি পোস্ট দিছিলো, মিস্টার ট্রাম্প করোনা টেস্টে নেগেটিভ আসছেন, কিং সেইখানে রিটুইট করেন— কিন্তু স্টুপিডিটির টেস্টে ভাই পজিটিভ। বয়স সত্তর অতিক্রম করলেও তার মন এখনও শক্তপোক্ত। ~ রূপকথা নাওয়ার
স্টিফেন কিং-এর জন্ম মেইনের পাের্টল্যান্ডে, ১৯৪৭ সালে। তার প্রথম ছােট গল্প প্রকাশিত হয় স্টার্টলিং মিস্ট্রি স্টোরিজ-এ, ১৯৪৭ সালে। ১৯৭১-এ তিনি হাই স্কুলে ইংরেজি পড়াতে শুরু রেন। লেখালেখি করতেন তখন শুধু সপ্তাহান্তে ও রাতে। ১৯৭৩ সালের বসন্তে, ডাবলডে অ্যান্ড কো., ক্যারী বইটিকে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরােদস্ত লোক বনে যান। এই পর্যন্ত পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি, পরিণত হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সফল লেখকে। মেইন ও ফ্লোরিডায় বাস করেন শ্ৰী, ঔপন্যাসিক। টাবিথ হি-এর সঙ্গে।