যে ইন্টারভিউখান আপনেরা পড়বেন বইলা ঠিক করছেন(!) সেইটা জেরুজালেমের ইয়াদ ভাশেমে বইসা গ্রহণ করা হয় ১৯৯৮ সালে। ড মিশাল বেন-নাফতালি এই ইন্টারভিউটা নেন। জ্যাক দেরিদা তখন ইসরায়েল ট্যুরে ছিলেন। ইয়াদ ভাশেম হইল জেরুজালেমের একটা মিউজিয়াম, যেইটা শোয়াহ বা হলোকস্টের ভিকটিমদের জন্য একটা মেমোরিয়াল এবং আর্কাইভ হিসাবে সার্ভ করতেছে। হিব্রুতে হলোকস্টরে শোয়াহ কওয়া হয়। ইসরায়েলে এর ইউজ আছে। তবে ইউজ শুরু হয় এইটা ১৯৪০ হইতেই। দেরিদার এই ইন্টারভিউও মূলত শোয়াহ-র উপরেই। দেরিদা কে? একজন ফরাসী ফিলোসফার। এই কারণে যার নাম আমাদের জানতে হয়। তবে না জানলেও সমস্যা নাই। উনারে জানিই যেহেতু, উনার ভাবনার থ্রুতে হলোকস্ট, বিশ্বযুদ্ধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, ক্ষমা, ইউরোপ, ডিকনস্ট্রাকশন এগুলা লইয়া আমরাও কিছু ভাবনার মওকা পাইতে পারি। বিশেষ কইরা মানবতাবিরোধী অপরাধ, তার বিচার এগুলা নিয়া আমাদের কিছু সিমিলার এক্সপেরিয়েন্সের ভিতর দিয়া যাইতে তো হইছেই। সেইখানে উনি কিছু পার্সপেক্টিভ অ্যাড করতে পারেন। উনি সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারে ইউরোপের রোলটারেও খুব ইন্টারেস্টিং একটা জায়গা থেকে দেখতেছেন। ইহুদি নিধনে উনি ইউরোপে একটা কালচারাল সায় দেখতে পাইতেছেন, ইহুদি নিধনের অনেক আগে হইতেই। ওইরকম একটা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে, আটচল্লিশে ইসরায়েল রাষ্ট্র ফর্মেশনের বিষয়টারে ইউরোপের কন্টিনিউয়াস জেনোসাইড-ক্রেভিংস হিসাবে দেখা যাইতে পারে। হোয়াইট ইউরোপিয়ান স্পিরিটের মইধ্যেই এমন স্পেস আছে যেইখানে জেনোসাইড নিয়া উনাদের গিল্টও আরেকটা রিলেন্টলেস পার্সিকিউশনের দিকে লিড করতে পারে। দেরিদার যে ডিকনস্ট্রাকশন, বেয়ন্ড দা লাইন ক্রিটিক করার যে জায়গা, এইটাও আসলে একটা পিওর ইউরোপিয়ান মোমেন্ট ছাড়া সম্ভবই ছিলো না। তো এইসব জায়গাতে এই ইন্টারভিউটারে আমার পার্টিকুলারলি ইম্পর্টেন্ট লাগছে। এছাড়াও আর্কাইভ বা ডকুমেন্টেশনের লিমিটেশন নিয়াও উনি কিছু কথা কইছেন। হলোকস্ট ডিনায়াল বা আমগো এইখানে জেনোসাইড ডিনায়ালরে ক্রাইম হিসাবে দেখার যে একটা প্রক্রিয়া বা আবদার আছে, উনার আলাপে সেই জিনিসটার একটা তাত্ত্বিক ভিত্তিও পাওয়া যাইতে পারে মনে হয়। তো এইসব জায়গায়, আমার মনে হয়, ক্রিটিকেরও স্পেস আছে। আর তরজমার ভাষা লইয়া অনেকের আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হইছে আমি যে ফ্লো-তে পুরা জিনিসটা রিসিভ করতেছি, সেই ফ্লো-টা তরজমায় অবিকল ট্রান্সমিট করতে পারাই হইল আমার তরজমার কাম। এইটা এমন না যে আপনে সবগুলা ওয়ার্ডের মিনিং ধরতে পারবেন বা এইরকম, বরং প্রিটেনশন ছাড়া, স্বতঃস্ফুর্তভাবে আপনের কাছে যদি এমনকি একদম নয়া টার্মও আসতে থাকে, পুরা কথাটার মর্ম ধরতে আপনের কোন সমস্যা হয় না। কারণ তখন টার্মের মিনিং আপনেই মুসাবিদা করতে পারেন, টেক্সটের লগে এমনই মহব্বত তৈরি হয় তখন। এই ইন্টারভিউয়ের তরজমাও ওইরকম একটা স্পেস মাথায় রাইখাই করা হইছে। সেইটা করতে পারা গেছে কিনা, সেইটা আরেকটা আর্গুমেন্টের টপিক হইতে পারে। মানে আমার(বা ইন্টারভিউ সিরিজের অন্য বইগুলির) তরজমার স্টাইলটারে সমস্যা মনে করিনা, স্টাইলটার এগজিকিউশান ঠিক আছে কিনা সেইটা বুঝতে আরেকটু ওয়েট করতে হইতে পারে। পড়েন আপনেরা। জানান কী কী ভাবলেন। ইব্রাকর ঝিল্লী
জাক দেরিদা (১৫ জুলাই ১৯৩০ – ৯ অক্টোবর ২০০৪) বিংশ শতাব্দীর একজন ফরাসি দার্শনিক। বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পৃথিবীর চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে তিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। তার প্রবর্তিত তত্ত্ব অবিনির্মাণ বা ডিকন্সট্রাকশন নামে অভিহিত। তিনি তৎকালীন ফ্রান্স অধ্যুষিত আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স নগরীর এল বিয়ার শহরতলিতে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছিল মুসলিম-প্রধান আলজিরিয়ায়। দেরিদা মূলত কাজ করেছেন ভাষা নিয়ে। ‘মানববিদ্যার চিহ্ন ও ক্রীড়া’ শীর্ষক প্রবন্ধের মাধ্যমে জাক দেরিদা বিশ্বদরবারে স্বীকৃতি ব্যাপক লাভ করেন। ষাটের দশকে কাঠামোবাদের পরিবর্তিত রূপ উত্তর-কাঠামোবাদ যা তাত্ত্বিকদের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। আর এতে দেরিদারই অবদান সর্বাধিক।