হাছন রাজা (১৮৫৪ - ১৯২২) যখন উনার গানগুলা লেখতেছেন ততদিনে মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪ - ১৮৭৩), বিহারীলাল রায় (১৮৩৫ - ১৮৫৪) কবিতা লেইখা মারাও গেছেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬১ - ১৯১৩), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’রা (১৮৬১ - ১৯৪১) উনাদের কবিতা-গান দিয়া কলোনিয়াল-কলিকাতা নির্মাণ করতেছেন। উনাদের টাইমেই হাছন রাজা’র গান’রে “উদ্ধার করার” নাম দিয়া, মিডল-ক্লাস সমাজে “প্রচার করার” নাম দিয়া “ফোক সং” বানায়া দেয়া হইছে। মানে, হাছন রাজার গান আর ‘বাংলা-সাহিত্য’ না তেমন, একটু ইনফিরিয়র :)। তো, এই “সাহিত্য” না হইতে পারার একটা বড় কারণ এইটা না যে উনার টেক্সটে লিটারেচার-এসেন্স নাই, বরং টেক্সটগুলা রিটেন-ফর্মে যতোটা না পাওয়া যায়, তার চাইতে ওরাল ফরম্যাটে বেশি এভেইলেবল। (একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হইতেছে হাছন রাজা ইংলিশ-এসে না লেখতে পারলেও হিন্দি-উর্দুতে কিছু জিনিস লেখছেন। এইরকম ইংলিশ না-জানার একটা কন্ট্রিবিউশনও এইখানে থাকার কথা…) বাংলাদেশের যত মানুশ রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দের কবিতা পড়ছেন, তার চাইতে অনেক বেশি মানুশই হাছন রাজা’র গান শুনছেন। কিন্তু টেক্সট হিসাবে পড়ার ঘটনা কম-ই না খালি, অলমোস্ট নাই-ই মনেহয়। যেহেতু আমাদের পড়ার-মেমোরি’তে এই টেক্সটগুলা নাই, এই গীতি-কবিতাগুলারে পড়লে একভাবে মনে হইতে পারে যে, “অশুদ্দ” এবং “আঞ্চলিক”, যেইটা যতোটা না ‘সত্যি’ তার চাইতে অনেক বেশি কলোনিয়াল-রিডিংয়েরই একটা ঘটনা। তো, হাছন রাজা’র গীতি-কবিতাগুলা ছাপানোর উদ্দেশ্য উনার গানের “সাহিত্য-গুণ”রে প্রচার করা না, বা “এইগুলাও বাংলা-সাহিত্য” - এই প্রমাণ হাজির করা না, বরং লিখিত-বাংলা এবং ওরাল-বাংলা’র ডিফরেন্সটা যে একটা কলোনিয়াল ইন্টারভেনশনের ঘটনা - অই জায়গাটারে হাইলাইট করতে চাওয়ার কোশিশও। এর বাইরে, অন্য অনেক জায়গা থিকাই, হাছন রাজা’র গীতি- কবিতাগুলা তো পড়া যাইতে পারে, বা পড়াটা দরকার আমাদের।