ঊনিশ’শ ঊনিশ সালের কায়রোর ‘ইসমাইলিয়া স্কয়ার’ নতুন নামে ভ‚ষিত হয় ‘তাহরির স্কয়ার’ বা স্বাধীনতা চত্বর নামে। সে-বছর মিশর বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে এই চত্বর। ঊনিশ’শ বায়ান্ন সালের মিশর বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুও তাহরির স্কয়ার। নতুন শতকে মধ্যপ্রাচ্যে যে ‘আরব বসন্ত’-এর উন্মেষ এই তাহরির স্কয়ারকে ঘিরে, তা নাড়া দেয় গোটা বিশ্বকেই। কিন্তু আরব-বসন্ত পরবর্তী আরব দুনিয়ায় দেখা গেল নতুন আরেক বাস্তবতা— রক্তপাত শুরু হলো নতুনভাবে, রাজনীতির মেরুকরণ ধোঁয়াশায় ঢাকতে শুরু করে। আর ঠিক এই সময়টির অব্যবহিত আগে-পরে আরবি সাহিত্য জগতেও এই আন্দোলেনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সমকালীন কবিদের সেই সময়ে লেখা কবিতা-গল্পে পাওয়া যাবে দিনবদলের আগে-পরের ঝঞ্ঝা-ক্ষুব্ধতাও। দু’হাজার ষোল সালে, আরব বসন্ত আন্দোলেনের প্রায় পাঁচ বছর পর ‘আরব বসন্ত’ সময়কালে রচিত বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ করি। সেখান থেকে সিরিয়ার কবি ফওয়াদ মুহম্মদ ফওয়াদ, মিসরের কবি মোহামেদ মেতওয়ালি, লেবাননের কবি ইয়েহিয়া জাবের এবং ইরাকের কবি মানাল আল-শেখ-এর কবিতা নিয়ে প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় ‘অবরুদ্ধ সময়ের কলতান’ নামের সংকলনে চারটি কবিতা ছাপা হয়। সেসময়, এবং তার বছর খানেক পর পর্যন্ত ভাবনায় ছিল আরও বেশ কিছু মধ্যপ্রাচ্যের কবিতা অনুবাদ করব। নিয়মিত বিরতি দিয়ে কবিতার ফোল্ডার খুলতাম, নতুন কিছু অনুবাদ করা হতো না, কিন্তু মানালের কবিতা পড়তাম এবং আরেকবার খুঁজতাম তিনি নতুন কিছু লিখলেন কী-না। সেরকমই একদিন, মানালের কবিতা পড়তে গিয়ে লাদান ওসমানের কবিতার সঙ্গে পরিচয়। পরিচয়ের এই সুতো ধরেই ‘পীতরঙা পুতুল’ অনুবাদ গ্রন্থের সূচনা, লাদানের একটি কবিতার শিরোনামেই। সাহিত্যের পাঠক হিসাবে আমার পাঠাভ্যাস সীমিত। এটা যেমন বড়াই করে বলার কিছু নয়, তেমনি এ-নিয়ে হীনমন্যতায়ও ভুগি না। তবে কবিতার নিবিড় পাঠক না হলে কিছুটা মুশকিলই। এই গ্রন্থটিতে ভিনদেশী নারী কবিদের কবিতা সংকলিত হবে এটাই ছিল প্রাথমিক এবং একমাত্র সূচক। ধীরে ধীরে আরো কিছু সূচক নিয়ে ভাবনা তৈরি হেলা। সেইসব সূচককে মাথায় রেখে বেশ কয়েকবার কবিদের তালিকা বদলাতে হয়েছে, আগেকার করা কিছু অনুবাদ কবিতা সরিয়ে নতুন কবিতা যুক্ত করতে হয়েছে, প্রতিনিধিত্বশীল কবিকে তালিকায় না রেখে তরুণ-অনালোচিত কবির কবিতা স্থান করে নিয়েছে ইত্যাদি। এবং এ-সবই আমার পাঠ-অভিজ্ঞতাকে ঋদ্ধ করেছে। এই সংকলনের পাঠকদের প্রতি দায় স্বীকার নয়; সবিনয়েই জানিয়ে রাখি, এই সংকলনের সকল কবি এবং তাদের কবিতার নির্বাচন কেবলই আমার ইচ্ছাধীন ফলে পাঠক হিসাবে আপনার পাঠ-ভ্রমণে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলে, আমি সমব্যথী। সংকলনের কবিতাসমূহ আরবি, সোয়াহিলি, কুর্দিশ, ফরাসি, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায় রচিত। যা বিভিন্ন সময়ে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়ে সংকলনভুক্ত হয়েছে। আমার অনূদিত এই সংকলনের সব কবিতাই ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করা। পান্ডুলিপি গুছিয়ে আনার পর কবি-বন্ধুদের পড়তে দিয়েছি এবং তাদের পরামর্শ ও মতামত কবিতাগুলোকে আরো কবিতা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। বিশেষ সকলকে ধন্যবাদ। মঙ্গল হোক মাহমুদ আলম সৈকত মেম্বার ঘাটা কক্সবাজার