হাবিবা বেগম তথাকথিত অধ্যাপক কিংবা গবেষক না হয়েও ভেবেছেন দেশের ভাষা নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে, সংস্কৃতি নিয়ে, আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে। স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মাধ্যমেই জাতীয় ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়, এই সত্য অনুধাবন করেই তিনি ভাষা আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেছেন। যেহেতু তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থান করেন, তাই তাঁর পক্ষেই সম্ভবপর হয়ে উঠেছে এই ক্ষেত্রসমীক্ষাভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে এই ধরনের প্রবন্ধ রচনা। ঠাকুরগাঁওয়ের লোকশিল্প নিয়ে তাঁর প্রবন্ধটিও তৃণমূলের প্রাথমিক তথ্য নিয়ে আবর্তিত। ফোকলোরচর্চার নতুন হিসেবে এই প্রবন্ধটিও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সম্প্রীতিরক্ষার কৌশল নিয়েও হাবিবা বেগম চিন্তা করেন। তিনি মনে করেন প্রেম আর সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমেই সম্প্রীতি রক্ষা করা যায়। এই প্রবন্ধে হাবিবা বেগমের উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ মেলে। একই চেতনাজাত প্রবন্ধ ‘বাংলা সংস্কৃতি ও নববর্ষ’। চিন্তা ও যাপনে উদার ও অসাম্প্রদায়িক না হলে এই ধরনের প্রবন্ধ লেখা কঠিন। হাবিবা বেগম এ-রকম মননের অধিকারী বলেই পহেলা বৈশাখের মতো ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবকে তুলে ধরেছেন। হাবিবা বেগমের ভাবনা সুদূরপ্রসারী। তাই তিনি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিয়াল এবং বিচ্ছেদি গানের স্রষ্টা বিজয় সরকারের গান নিয়ে আলোচনা করেছেন। একজন লোকজ ধারার কবিকে নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ খুবই চিত্তাকর্ষক। হাবিবা বেগমের এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে অতি সাম্প্রতিক তিনজন লেখককে নিয়ে প্রবন্ধ। আশির দশকের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, নব্বই দশকের গল্পকার মনি হায়দার এবং আমার কবিতা নিয়েও তিনি প্রবন্ধ লিখেছেন। সমকালীন সাহিত্য নিয়ে প্রবন্ধ রচনার এই প্রবণতা এখনকার লেখকদের মধ্যে খুব একটা নেই। এটি এক ঝুঁকির কাজও বটে! আমরা কাকে নিয়ে লিখেছেন, সেটি বিবেচনা না করে যদি কী লিখেছেন, সেটি বিবেচনা করি, তাহলে বুঝতে পারব যে, হাবিবা বেগম তথাকথিত গোষ্ঠীবৃত্তের বাইরে এসে সাহিত্যের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথাই প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে হাবিবা বেগমের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতাকে আমরা সনাক্ত করতে পারি।