আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট জানার পর মনেমনে খুব ক্ষুব্ধ হয় সোবহান। আবারও কন্যা সন্তানের জন্ম দেবে তার স্ত্রী শেফালি। বিষয়টি মেনে নিতে পারে না সোবহান। কিছুদিন পর তার স্ত্রী শেফালির ওয়াটার ব্রেক করলে তার বাবার বাড়ির পাশেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সোবহান জোর করেই চেপে বসে বরিশাল টু ঢাকাগামী লঞ্চে। দীর্ঘ জার্নিতে কন্যা সন্তানটি জন্ম নেয় এবং শিশুটিকে লঞ্চ থেকে পানিতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সোবহান। সোবহানের পরিকল্পনা বুঝে ফেলে শেফালি। শারীরিক আঘাত ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় শেফালি। উপয়ান্তর না পেয়ে লঞ্চের কামরায় শিশু দুটিকে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক বাবা সোবহান। খবরটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। জন্ম জটিলতা থাকার পরও সৌভাগ্যক্রমে শিশু দুটি অর্থাৎ মেরী ও তার বোনকে দত্তক নেয় এ সমাজেরই প্রভাবশালী দু’টি নিঃসন্তান পরিবার। আর দশটা মানুষের মতো খুব ভালো সুযোগ সুবিধা পেয়ে বড় হয় তারা। সুশিক্ষিত হয়। বড়বোন সুমীর বিয়ে হয় বড়ঘরে। কিন্তু বিপত্তি হয় যখন মেরীর বাবা করোনায় মারা যায়। যেকথা বেঁচে থাকতে বলতে পারেননি মেরীর বাবা মা- তাদের মৃত্যুর পর পারিবারিক উকিলের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে নতুন নতুন সব তথ্য! মেরীর জীবনের কঠিন সত্য! মেরী জানতে পারে তার আরও একটি বোন আছে। অন্যদিকে মেরী ও রবিনের ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় রবিনের পরিবার। এ দুঃসময়ে মেরীর পাশে এসে দাঁড়ায় একজন স্বেচ্ছাসেবী, কর্মী আনোয়ারা অনাথাশ্রম এবং বৃদ্ধাশ্রমের কর্ণধার মিথুন। ওয়ার্ল্ডব্যাংক বাংলাদেশ শাখায় চাকরি করে রবিন। ঠিক যতটা স্বপ্ন ছিল চাকরি নিয়ে, চাকরি করতে গিয়ে ততটাই হতাশ হয় সে। প্রথম দিকে রবিন তেমন কিছু না বুঝলেও টের পায় বাংলাদেশের কিছু মানুষ কেন চিরদিন গরিব থাকে আর ধনীরা কেন ধনী হয় দিনদিন। এটা বুঝতে গিয়েই বাধে যত বিপত্তি। রবিন শুধু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাকরিটাই হারায় না, প্রাণপ্রিয় বন্ধু-প্রেমিকা মেরীকেও হারাতে হয়... ওয়ার্ল্ডব্যাংক বাংলাদেশ এর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা পলাশ মৃধার কুচক্রে আটকে রেখে ধর্ষণ করে পলাশ মৃধা ও মন্ত্রণালয়ের দু’জন...ঘটনাচক্রে মেরীর হাতে খুন হয় পলাশ মৃধা! খুনের পর মেরী জানতে পারে এই নরপিশাচ লোভী পলাশ মৃধা তারই একমাত্র বোন সুমীর স্বামী...
মাহফুজা অনন্যা: ছােটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন সত্যিকারের মানুষ হওয়া। আর মানুষ হওয়ার পথের অন্তরায়গুলােকে পুঁজি করে নিভৃতে লিখে চলেন কবিতা। তার কবিতায় ন্যাকামাে নেই আছে বাস্তবতার ছোঁয়া। এছাড়াও প্রকৃতি, প্রেম, বিরহ, দেশ, কাল, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তিনি কবিতা লিখেন। সমসাময়িক বিষয়গুলাে নিয়ে তিনি ভাবতে বেশি পছন্দ করেন, তার কবিতা পড়লে তা স্পষ্ট বােঝা যায়। যখন অন্যান্য খ্যাতিমান কবিরা দেশের সংকটে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান কিংবা পদকের লােভে ঘুমের ভাণ ধরে গরম কাথার নিচে ছন্দময় গতিতে পা দোলান তখন তরুণ কবি মাহফুজা অনন্যা নানারকম অসংগতিকে তুলে ধরছেন তার কবিতায়। কবিতা লেখার পাশাপাশি দেশে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় কলম চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তার কবিতা ও কলাম প্রকাশিত হয়। ব্যক্তিগত সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যর চেয়ে সমাজ, দেশ, দেশের মানুষকে নিয়ে বেশি ভাবেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে মানবতার এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কবি মাহফুজা অনন্যার জন্ম। সময়ের সাহসী কবি কুষ্টিয়া জেলার মধুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মােঃ সাদ আহমেদ বিশিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী। মা তাহমিনা আহমেদ, কবিতাপ্রেমী এবং সুগৃহিণী। তিন ভাইবােনের মধ্যে তিনিই বড়। বােন লাভসিতুল লাকি ও ভাই মেহফুজ আনানের অনুপ্রেরণায় লেখালেখি করেন। পেশা শিক্ষকতা (ম্যাথ ইনস্ট্রাক্টর), ঢাকায় বসবাস। বাংলাদেশ ব্যাংক হাইস্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। (গণিত) মােঃ ফারুক হােসেন তার জীবনসঙ্গী। বড় ছেলে মাধুর্য (১২) ও ছােট ছেলে সৌরাজ্য (৩)।। তার প্রকাশিত আরও দুটি কাব্য- ‘সােনালি অসুখ। এবং কামার্ত নগরের কামিজ।