"গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশে" বইটির ফ্ল্যাপের লেখা: গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ গ্রন্থে বাংলাদেশের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে বিধৃত হয়েছে। আজ যে ভূখণ্ডের নাম বাংলাদেশ, এক সময় তা-ই পরিচিত ছিল গঙ্গাঋদ্ধি নামে। খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিবর্তনের ধারা তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। এই বিবর্তন থেকে উদ্ভুত কিছু মৌল প্রশ্নও আলােচিত হয়েছে। গঙ্গাঋদ্ধি নিয়ে ইতিহাসে তেমন আলােচনা হয়নি। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-পুরাণ-উপাখ্যানে উল্লেখিত না হলেও কার্তিয়াস, দিওদোরাস, প্রতার্ক প্রমুখ গ্রিক লেখকের ইতিবৃত্তে, স্ট্রাব ও টলেমির ভূগােলবৃত্তান্তে আর ভার্জিলের মহাকাব্যে এই নামটি ভাস্বর হয়ে রয়েছে। তৃতীয় শতকের শেষে বা চতুর্থ শতকের প্রথমার্ধে গুপ্তরাজদের আদিপুরুষ শ্রীগুপ্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে এক ক্ষুদ্র রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং সেই ক্ষুদ্র রাজ্য সমৃদ্ধি লাভ করে গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিকাশ ঘটায় বলে ধারণা করা হয়। চতুর্থ শতকে বাংলায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের উত্থান ঘটে। পশ্চিম বাংলার সুসুনিয়া পাহাড়ের গুহালিপি থেকে জানা যায় দামােদর নদীর তীরে ছিল সিংহবর্মা ও চন্দ্রবর্মাদের রাজধানী পুস্করণ, যার বর্তমান নাম পােখর্ণা গ্রাম। বাঁকুড়া থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ছিল এই রাজ্যের বিস্তৃতি। সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মাকে পরাজিত করে। পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলা জয় করেন। সমতট প্রথমে ছিল করদ রাজ্য, পরে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চম শতকের অন্তর্বিদ্রোহ ও হুনদের আক্রমণের ফলে গুপ্তরাজ্য ভেঙে পড়ে। ষষ্ঠ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত উত্তর-বাংলায় গুপ্ত শাসন অব্যাহত থাকে। ৫০৭-এ সমতটের সামন্ত রাজা ছিলেন বৈন্যগুপ্ত। সপ্তম শতকের শেষার্ধ থেকে অষ্টম শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় খড়গ রাজবংশের চারজন রাজা খড়গােদ্যম, জাতখড়গ, দেবখড়গ ও রাজারাজভট্ট রাজত্ব করেন। এভাবে অষ্টম শতকের মাৎস্যন্যায়ের পর কীভাবে পাল সম্রাজ্যের উত্থান ঘটল, কীভাবে তাদের পতনের পর সেন রাজত্বের বিকাশ হলাে এবং কীভাবে তুরস্কশক্তির আবির্ভাব ও সম্প্রসারণ ঘটল- ইতিহাসের এসব যাবতীয় ঘটনা ধারাবাহিকভাবে অত্যন্ত সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে এই গ্রন্থে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির নানা বিষয়ও এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের একজন অন্যতম শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও বিচারক। ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মুহাম্মদ জহির উদ্দীন ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং আইনজীবী। শৈশব থেকেই রাজনৈতিক বিষয়াদি ও সংস্কৃতির দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাঁরা তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পরবর্তীতে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৫১ সালে এম.এ. পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। সহকারী এডভোকেট জেনারেল, হাইকোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান একাধারে একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ এবং অভিধানপ্রণেতা। তিনি একজন ভাষা সৈনিক; ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমূহ ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগেরই বহিঃপ্রকাশ। তিনি উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বই সমূহ হলো ‘রবীন্দ্র সম্বন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)’, ‘যথা-শব্দ (১৯৭৪)’, ‘কোরআন সূত্র (১৯৮৪)’, ‘ভাষার আপন পর (২০১২)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত প্রবন্ধগ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭) সহ আরো বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর বই সমগ্র পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।