ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম (২৯-৫-১৯০৮) খ্রীষ্টাব্দে বিতৃদত্ত নাম প্রবোধকুমার। মানিক তাঁর ডাক-নাম। পিতার সরকারি চাকরির সূত্রে বাঙলা ও বিহারের বহু অঞ্চলে তাঁর বাল্যকাল কেটেছে। বাঁকুড়ায় ওয়েসলিয়ান মিশন কলেজ থেকৈ আই. এস, সি পাশ করে অঙ্কে অনার্স নিয়ে কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ প্রকাশিত হলে (১৯২৮) সাহিত্য জগতে সাড়া জাগে। তাঁর উপন্যাস ‘দিবারাত্রির কাব্য’ মাত্র ২১ বছর বয়সের রচনা। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও সাহিত্য কর্মকেই জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবল্বন হিসেবে গ্রহণ করেন মানিক। প্রথম জীবনে ২/৩ বছর মাত্র চাকরি করেছিলেন। ১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর ‘প্রথম উপন্যাস’ ‘জননী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর রচতি শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। নানা কারণে প্রচন্ড অর্থাভাব দেখা দিলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার সাহিত্যিক বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। সম্ভবত ‘খুনী’- তাঁর শেষ উপন্যাস । সমালোচক শ্রী কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ‘আধুনিক আত্নশক্তির সমস্ত দুর্বোধ্যতা ও চিত্তবিক্ষপের সমগ্র ঘূর্ণাবেগ তাঁহার উপন্যাসে বিধৃত। মার্ক্স-এর শ্রেণীসংগ্রামমতত্ত্ব ও ফ্রয়েডের মনো বিশ্লেষণ বাংলার অতীত-আচ্ছন্ন-জীবন-চর্চায় যতখানি শিল্পসম্মতভাবে রূপায়িত হইতে পারে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস তাহার চরম সীমায় পৌছিয়াছে।’ ঋদ্ধ ও লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রন্থিত উপন্যাস ‘খুনী’-তে জীবন যুদ্ধে পরাজিত মানিক-এর জীবনের অনেক অজানা কাহিনীর সন্নিবেশ ঘটেছে । মাত্র ৪৯ বছর বয়সে (৩-১২-১৯৫৬) তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, নিয়তিবাদ ইত্যাদি বিষয়কে লেখার মধ্যে তুলে এনে বাংলা সাহিত্যে যিনি অমর হয়েছেন, তিনি হলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, আর মানিক ছিলো তাঁর ডাকনাম। বাবার বদলির চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, যার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের পটভূমিতে বিভিন্ন সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। প্রবেশিকা ও আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গণিত বিষয়ে অনার্স করতে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়াশোনাকালে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তিনি 'অতসী মামী' গল্পটি লেখেন। সেই গল্পটি বিখ্যাত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় ছাপানো হলে তা পাঠকনন্দিত হয় এবং তিনি সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সাহিত্য রচনায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন, যার ফলে তাঁর পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং তিনি আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তাঁর হাতে বাংলা সাহিত্যে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় ঐ সময়ে, যখন সারা পৃথিবী জুড়ে মানবিক বিপর্যয়ের এক চরম সংকটময় মুহূর্ত চলছে। কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় তাঁর লেখায় একসময় এর ছাপ পড়ে এবং মার্ক্সীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র। ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষণেরও প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র-তে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে 'পদ্মানদীর মাঝি', 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'শহরতলি', 'চতুষ্কোণ', 'শহরবাসের ইতিকথা' ইত্যাদি বিখ্যাত উপন্যাস, এবং 'আত্মহত্যার অধিকার', 'হারানের নাতজামাই', 'বৌ', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'সমুদ্রের স্বাদ', 'আজ কাল পরশুর গল্প' ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা রচনার কিছু নিদর্শন থাকলেও সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেনি। অসামান্য এই কথাসাহিত্যিক মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।