ঢাকা ছিল ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গ প্রদেশের রাজধানী। এই ঢাকাই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ “চীন-বার্মা-(ব্রিটিশ) ইন্ডিয়া থিয়েটার”-য়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার ছিল, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে ঢাকা। যথার্থ অর্থেই ছিলো আন্তর্জাতিক শহর। অ্যাংলো-আমেরিকান মৈত্রী জোটের শরীক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ক্রুরা ঢাকার তেজগাঁও ও কুর্মিটোলার বিমান-ঘাঁটিতে ছিলেন, “চীন-বার্মা-(ব্রিটিশ) ইন্ডিয়া থিয়েটার”য়ের তথা ”সিবিআই”-য়ের মিশনে অংশ নিয়েছেন। চমকপ্রদ হলেও বাস্তব সত্য হলো যে ঢাকা’র ইতিহাসে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধীয় রণমদমত্ত ”সিবিআই”-য়ের কয়েকটি বছর সার্বিকভাবে অবহেলিত, বিস্মিৃত; ঢাকা তাই তার পূর্ণ ইতিহাস থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে। ঢাকার সন্তান নাঈম হক ঢাকার ফাঁকা শূন্য অধ্যায়টিকে বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে পুনরুদ্ধারের অদম্য এক তাড়নায় নতুন নতুন তথ্যের সন্ধানে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয আর্কাইভস, ইউএস লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ আর্কাইভ, দ্য লাইব্রেরি অব ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডস, ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং জাপানের টোকিও-তে অবস্থিত জাপানিজ আর্কাইভসে দীর্ঘসময় ব্যয় করেন, তেমনি পাশাপাশি তিনি কুর্মিটোলা ও তেজগাঁও বিমানঘাঁটিতে যেসব মার্কিন বিমান ক্রু তখন কর্মরত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে মনোনিবেশ করেন। তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং কখনোবা তাঁরা যখন আর নেই পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। গ্রন্থটিতে তেজগাঁও ও কুর্মিটোলায় কর্মরত ছিলেন, কয়েকজন মার্কিন ক্রুর ঢাকার সেনা জীবনের কাহিনি বলা হয়েছে এবং নেতাজি সুভাষ ও আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রসঙ্গও চলে এসেছে। গ্রন্থটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ বিষয়ক আরেকটি ইতিহাসের বই নয়, বরং ঢাকার ইতিহাসের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন সময়টুকুর শূন্য ফাঁকা অধ্যায়টিতে, যৎসামান্য হলেও, পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন লেখক। ইতিহাসের পূর্ণতা পাওয়ার অধিকার ”ঢাকা”র নিশ্চয় রয়েছে!