শব্দ গঠন বাক্য বুনন এবং বলার ভঙ্গিতে এক অনায়াস প্রচেষ্টা যা পড়তে গেলে পড়া ছেড়ে ওঠা যায় না। মূল কৃতিত্বটাই এখানে। জীবনের বিভিন্ন বাঁক ছুঁয়ে যাওয়া আত্মকথনের পাশাপাশি তুলে এনেছেন সমাজের কষ্ট কাব্য, এক ধরনের দৃঢ়চিত্ত অথচ প্রকট নয় এমন সংগ্রামের কাহিনি। কখনও কখনও ইতিহাসকে তুলে এনেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেখানে লেখক বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা ছিলো, ছিলো অস্তিত্বের স্পর্শ। নিতান্তই গ্রামীণ জীবন থেকে উঠে আসা একজন সফল মানুষের পথ চলায় অসংখ্য চরিত্র এঁকেছেন। কখনও তাঁরা হয়েছেন উৎসাহের কারণ কখনও বেদনাহত হয়েছেন তাঁদের দ্বারা যার বর্ণনায় চিত্রকল্প তৈরী করেছেন মাত্র আঘাত করেননি, এখানেই মনে হয় আত্মজীবনী লেখার বড় চ্যালেঞ্জ যা এই বইয়ের বড়ো একটা বৈশিষ্ট্য। তিনি চিকিৎসক হওয়ার দূর লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষা জীবনের সংগ্রামী বাঁকগুলোতে যে ঝুঁকির বর্ননা তুলে এনেছেন তা সেই সময়কার একটা খণ্ডচিত্র হলেও সেটি এমন ভাবে বলে গেছেন তাতে অনেক পাঠক হতাশা থেকে উঠে আসার অনুপ্রেরণা পাবেন, পাবেন লেখকের সরল স্বীকারুক্তি। মেডিকেল জীবনের অসংখ্য চরিত্র তুলে এনেছেন। শব্দ গুচ্ছে আছে আনন্দ অভিমান, রাজনীতির ছোঁয়া যা পড়তে পড়তে ব্যক্তিগত জীবনকেও মিলিয়ে নিয়ে এক ধরনের তৃপ্তি পাওয়া গেলো। কেউ কেউ জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন কেউ ঝরে পড়েছেন কেউ বা হয়ে গেছেন ইতিহাসের অংশ- যেমন বন্ধুবর শহীদ ডা. মিলন। লেখার বড়ো একটা অংশ জুড়ে আছে চাকুরি জীবনের নানান ঘটনা যা এক নিশ্বাসে পড়তে না পারলে পরিতৃপ্তি পাওয়া যায় না। কোথাও ক্ষোভ কোথাও অসংগতি কোথাও বা বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতার অকপট স্বীকারুক্তি পুরো বইটিকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। আত্মজীবনী মূলক বই লেখা খুবই দুরূহ কাজ। আমার বিবেচনায় অনায়াসপাঠ্য বন্ধুবরের গ্রন্থটা তাঁর সাফল্যের আরেকটা দিক উন্মোচন করলো। বইটির সাহিত্যমূল্য বিবেচনায় নেয়ার সময় অনেক প্রিয় প্রতিষ্ঠিত লেখকের পাশে এটিকে রাখলে অতিশয়োক্তি হবে বলে মনে করি না। সতীর্থের কীর্তিতে অনুপ্রাস অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ২ ডিসেম্বর ২০২২
অধ্যাপক ডা. সুধাংশু কুমার বল্লভ কর্মজীবনে ডা. এস কে বল্লভ নামে সমধিক পরিচিত। জন্ম ১৯৫৮ সালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতা শ্রী উপেন্দ্র নাথ বল্লভ কর্মজীবনে রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমাজসেবা মূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। হারতা ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। মাতা শ্রীমতি ফুলমালা বল্লভ, গৃহিণী। স্থানীয় হাবিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২২ সালে নাক কান গলা রোগের চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য গ্লাসগো রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সারজনস-এর ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি কর্মজীবনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার হিসাবে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনার কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। অবশেষে খুলনা মেডিকেল কলেজে নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত থেকে ২০১৬ সালে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন ।