ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা বাংলাদেশের সত্তার অন্বেসা : বাংলাদেশ নিজের অস্তিত্ব ঘোষণাকারী সর্বশেষ বৃহৎ জাতি-রাষ্ট্র। এ ভূ-খণ্ডের জনগোষ্ঠী এমন একটি জাতি যা সিকি শতাব্দীর মধ্যে দু’বার তার রাষ্ট্রীয় সত্তার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এর সাম্প্রতিক ইতিহাসের বাঁক-পরিবর্তন ঐতিহাসিকদের জন্য এক প্রহেলিকা।‘বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা’ গন্থে আপাতদৃষ্টিতে রহস্যময় এই জাতির ঐতিহাসিক উৎসের অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।প্রকরণের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ চর্চার দু’টি ক্ষেত্রে এই গ্রন্থ নতুন মাত্রা যোগ করেছে।প্রথমত, এই প্রচ্ছন্ন জাতির ঐতিহাসিক বিবর্তন ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক কাঠামোর অন্তরালে যেসব তত্ত্ব রয়েছে তা সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, গ্রন্থটিতে এ অঞ্চলের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যষ্টিক ভিত্তির অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।তৃণমূল পর্যায়ের ব্যষ্টিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ দিয়ে শুরু করে গ্রন্থটিতে গ্রামীণ বসতি-কাঠামোর বিভিন্ন নিয়ামক পরীক্ষা করা হয়েছে। অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে, গ্রামীণ বসতির আনুষ্ঠানিক-সংঘবদ্ধতার ঘাটতি এ অঞ্চলের রাজনৈতিক খণ্ডীভবন, অস্থিতিশীলতা এবং দলাদলির পেছনে কাজ করেছে।গ্রন্থটির অনুকল্প হল-বাংলাদেশের পল্লী এলাকার প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসই ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল; অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ এলাকার গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান ইসলামের প্রসারকে করেছিল বাধাগ্রন্থ।
‘৭১ পূর্ববর্তী সময়ে তিনি সর্বদাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন, ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগের সমর্থক। ২৫ মার্চের কালরাতের পর যখন অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়নি, তখনই নিজ এলাকা হবিগঞ্জে পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেন তিনি, নিজ হাতে তৈরি করেন অস্ত্র উন্মুক্তকরণের সরকারি লিখিত অনুমতি। অস্থায়ী সরকারের জন্য তহবিল গড়তে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিন কোটি টাকা ট্রাকে করে আগরতলা পৌঁছে দেন। বাঙালির চেতনা ও অহংকারের মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার সাথে কর্তব্য পালন করা এই মানুষটির নাম আকবর আলি খান। আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। নিজ গ্রামেই স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। মাঝে এক বছরের জন্য লাহোরের সিভিল সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর এস.ডি.ও হিসেবে তার কর্মস্থল হয় হবিগঞ্জে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন। মাঝে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং পি.এইচ.ডি করে আসেন। আকবর আলি খান এর বই সমূহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ঐতিহাসিক উত্থান নিয়ে প্রামাণ্য দলিল। এছাড়াও, আকবর আলি খানের বই বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তন এবং এদেশে ইসলামের বিকাশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণালব্ধ দলিল। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত তার বই ‘হিস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ তার সেরা রচনা। আকবর আলি খান এর বই সমগ্রতে আরো আছে ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’, ‘বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য’, ‘বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা’, ‘ডিসকভারি অব বাংলাদেশ’ ইত্যাদি বই।