রাস্তার মাঝখানে একটা বিশাল জটলা বেঁধেছে। অনেক মানুষ একসাথে জড়ো হয়েছে। সবাই যেন একজন আরেকজনকে কিছু বলছে। এত মানুষ একজায়গায়, তাও এই সময়ে। এই সময়টাতে রাস্তায় জটলা মানেই কোন জায়গায় যেতে বিলম্ব হয়ে যাওয়া। আচ্ছা, দিনে দিনে মানুষের বিচার-বুদ্ধি কি কমে যাচ্ছে! অনেকক্ষণ রুপরেখা রাস্তার এই জ্যামে প্রায় পঁচিশ মিনিট আটকে ছিল। অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে, খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। রুপরেখা এবার সি এন জি থেকে নেমে এসে নিজেই জটলার কাছে এগিয়ে গেল। দেখল একজন মানুষ মাটিতে পড়ে আছে। রাস্তা দিয়ে র****---ক্ত ভেসে যাচ্ছে। রুপরেখা নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখল, শ্বাস-প্রশ্বাস আসে কিনা? না, নেই। আরে, এ যে দেখি খু***---ন। বুকের কাছে কাটা কিছু অংশ দেখে মনেই হচ্ছিল, মনে হয় বেঁ*****---চে নেই। আর উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে শুধু দেখছে। এত সকালে যেহেতু লা*****শটা দেখা যাচ্ছে, তাজা র***-**ক্ত ভেসে যাচ্ছে। তাহলে খু****--নটা কি রাতেই হল? অবশ্য না জেনে কিছু বলা ঠিক হবে না। হায়রে মানুষের নিয়তি, জীবিত থাকলে মানুষ বলা হয়, নাম ধরে ডাকা হয়, আর এই জীবনটা বের হয়ে গেলেই বুঝি লা****--শ হয়ে যায়। আচ্ছা, কেউ কি পুলিশে খবর দিয়েছে? সবাই শুধু জটলা পাকিয়ে শোরগোল করতে ব্যস্ত। রুপরেখা এবার ব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, “কেউ কি পুলিশে খবর দিয়েছেন?” সবাই নিশ্চুপ। কেউ কেউ তো মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রুপরেখা লাশের খুব কাছে গিয়ে বসল আর ভালো করে দেখতে থাকল সবকিছু। কোনকিছু হাত দিয়ে দেখার আগে চিন্তা করল, পুলিশকে আগে খবর দেয়া দরকার। রুপরেখা ফোন করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি রবিনকে জানাল। রবিন, রুপরেখার পূর্ব পরিচিত, রুপরেখার জামাই এর বন্ধু। এর আগের ঘটনায়, অপর্নার মৃ***--ত্যু রহস্য খুঁজে বের করতে রবিন সাহায্য করেছিল। এবার রুপরেখা একটু জোড় গলায় বলল, ‘জানেন তো সবাই, এটা পুলিশ কেস। কিন্তু আপনারা কেউ পুলিশে খবর দেন নাই। যেহেতু পুলিশ কেস, এখানে এইভাবে জটলা না পাকানো ভালো হবে। যে যার কাজে চলে যান।’ একটু ফাঁকা হলে রুপরেখা কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। রুপরেখা যে “জাগরণ”পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে, সেই পত্রিকায় একটা খবর ছাপাবে। পত্রিকায় প্রকাশিত হলে এই লা*****শটার পরিচয়ও পাওয়া যাবে। খুব তাড়াতাড়ি রুপরেখা তার সাথে থাকা নোটবুকে টুকটাক কিছু লিখে রাখে। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, রবিনের সাথে দেখা করার জন্য।
পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৫ই জানুয়ারী রাতে জন্ম নেয়া মেয়েটির ডাকনাম চুমকি। পরিবার-পরিজন সবাই আমাকে চুমকি নামেই ডাকে। জন্মের সময় সবাই অনেক চমকে গিয়েছিল, কারণ অনেক কালক্ষেপণ হয়েছিল। আর রুয়েটে পড়াশোনা করার সময় মায়ের খুব কাছের বান্ধবীর নাম ছিল চুমকি। তাই ‘চুমকি’ নামটি রেখেছিল আমার খুব কাছের একজন মানুষ আমার দিদা, সেই মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। ছোটবেলা থেকেই আমি সিনেমা দেখার খুব পোকা ছিলাম। শুধু দেখা বললে ভুল হবে, সিনেমা দেখে কাহিনীগুলো মুখস্থ বলে ফেলতে পারতাম। তখনকার সময়ে চার বছর বয়স থেকে ভিসিআরে বাবা আর বোনের সাথে প্রতি রাতে বাংলা সিনেমা দেখতাম। শতাব্দী রায় ছিল আমার প্রিয় নায়িকা। প্রথম যখন স্কুলে ভর্তি হই, আমার নাম জিজ্ঞেস করলে, আমি আমার নাম “শতাব্দী” বলেছিলাম। সেই থেকে আমার সার্টিফিকেট নাম শতাব্দী ঘোষ। আমার বাবা- ডাঃ দীপক কুমার ঘোষ, শিশু বিশেষজ্ঞ, সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। এখন অবসরে আছেন। আর মা - মিতা ঘোষ, সুনিপনা একজন গৃহিণী। স্কুল-কলেজ জীবন সবকিছু পাবনা শহরেই কেটেছে। স্কুলজীবনে প্রতি বছরে বার্ষিক পরীক্ষায় মেধাতালিকায় থাকার কারণে বই পুরস্কার পেতাম। তখন থেকেই পাঠ্য বই-খাতার বাহিরে অন্য বই পড়ার নেশা হয়। দশম শ্রেনীতে বার্ষিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসমগ্র। উপন্যাসের ভাষা এত কঠিন ছিল, বোঝার জন্য দুইবার পড়েছিলাম। মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন কবিতা লেখা শুরু করি। যা লিখতাম, কখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি। এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করার পর গাইনি এণ্ড অবস বিষয়ে এক বছর ট্রেনিং করেছি। এরপর ফার্মাকোলজি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী এমডি সম্পন্ন করেছি। পেশায় চিকিৎসক, বর্তমানে আমি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি এণ্ড থেরাপিউটিক্স বিভাগে শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত আছি। শিক্ষকতার পাশাপাশি অসংখ্য কবিতা, গল্প ও ছোটগল্প লিখেছি; যা প্রথম ২০২১ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ইতিমধ্যে আমার লেখা গল্পগুলোর মধ্যে “আঠারো বছর পরে” এবং “পারমিতার মা” পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়াও আমি কবিতা আবৃত্তির সাথে যুক্ত আছি। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে ভীষণ ভালো লাগে। অনলাইনে লেখালেখি করি, ছবি তুলতে, গান শুনতে, টেলিভিশনে নাটক, সিনেমা দেখতে খুব ভালোবাসি। আর আমার ছোট্ট দুই ছেলে-মেয়ে উদ্দীপন আর ঊশষীর সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসি। ২০২২ সালের বইমেলায় আমার লেখা প্রথম সামাজিক উপন্যাস “রুপরেখার চুপকথা” প্রকাশিত হয়। বইটির পাঠকপ্রিয়তা আমাকে লেখালিখির জগতে বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়। এছাড়াও ২০২২ সালের বইমেলায় আরো দুইটি সংকলন ‘গল্পের বাক্স’ এবং ‘মুখোশ – একটি নদীর নাম’ – এ আমার লেখা গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ সালে আরো বেশ কয়েকটি প্রকাশিত সংকলনের নামঃ একমুঠো স্বপ্ন, স্বপ্নগুলো যেমন আমার আর হৃদয়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে প্রকাশিত সংকলনগুলোর নামঃ গল্পের বাক্স ৩, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে, গগন শিরীষ আর কৃষ্ণচূড়ার নীড় ম্যাগাজিনের প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যা। ‘মুখোশের আড়ালে’ হতে চলেছে আমার লেখা দ্বিতীয় মৌলিক সামাজিক ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাস। এই উপন্যাসটি যেন পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে, সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।