ভুমিকা সভ্যতার প্রথম দিন থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বঙ্গভূমিতে মানববসতির যে ধারাবাহিক বিবর্তন ঘটে চলেছে সেটাকে তুলে ধরাই হল এই বইটা রচনা করার মূল উদ্দেশ্য। এই বিবর্তন ঘটে চলেছে চাষ-আবাদ না জানা মানুষের বঙ্গদেশে আগমনের সময় থেকে আজ অবধি, এবং বলা বাহুল্য এর মাঝে এই মানব বসতি নানা রূপ ধারণ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই বিবর্তন বহু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, যেমন ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, অবস্থান এবং কয়েক হাজার বছর ব্যাপী তার পরিবর্তন, উৎপাদন ব্যবস্থার ক্রমোন্নতি, বহিরাগত নানা মানবজাতির সাথে সংমিশ্রণ ও তার বঙ্গীয় আত্মীকরণের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের ওপর ফেলে রাখা ছাপ, যার প্রভাব পড়েছে বসতি নির্মাণের ক্রিয়াকৌশলে ও বসতি এলাকার সামগ্রিক গঠনে। মানব বসতির এই গঠন প্রণালীর বিশ্লেষণের কাজ একটা আন্তঃবিষয়ক প্রচেষ্টা। এই কাজে প্রয়োজন ঐতিহাসিক, বাস্তুনির্মাণ প্রকৌশলী, নগরস্থপতি,অর্থনীতিবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদের মতো বহু ভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞকে। এই বঙ্গভূমির ইতিহাস একটা বহু চর্চিত বিষয় এবং এর ওপর গবেষণামূলক কাজ বহুদিন ধরেই হয়ে চলেছে। তার ফলে আমরা বাংলার ইতিহাসের অনেক তথ্যই পেয়েছি এবং ভবিষ্যতেও পাব এই আশা রাখতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলার বাড়িঘর তৈরি এবং নগরায়ণের কারিগরির বিবর্তন নিয়ে চর্চা বিশেষ হয়নি এবং এই কাজটা অনেকটাই অসম্পূর্ণ। আমার ধারণা এই কাজে দুই বাংলার কোনো প্রযুক্তিবিদ সেভাবে অংশ নেননি। আগেও বলেছি, এই ধরনের বিষয়ে বই রচনা করার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রযুক্তি বা ইতিহাস বিষয় জ্ঞানই পর্যাপ্ত নয়। সহযোজন দরকার সামগ্রিকভাবে ভূতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং প্রত্নত্তত্ত্ববিদের যৌথ প্রয়াসের। এই বই অনেকটাই সেই প্রয়াসের অংশ এবং একাধারে তার অনুঘটক মাত্র।