দৈনন্দিনের লিপিগুলো সংকলিত হয়ে কতিপয় বৃহস্পতির দিনলিপি হয়ে ওঠেছে। তার মানে প্রতিদিনকারই খসড়া নয় শুধু, একই বৃত্তের মতো, ঘুরেফিরে প্রতিদিনের কথাই নয়—দিনলিপি, ডায়েরি, রোজনামচা, দিনপঞ্জিকা, জার্নাল, কতভাবে বলা যায় এই লেখাগুলো-কে। যার ভাববার সীমাবদ্ধতা প্রক্রিয়াগত অনুশীলনের দিকে ধাবিত হয়—তাকে বারংবার বলার প্রয়োজন নেই শিল্পের বিস্তৃত পথের কত বাঁক! যখন যা উপলব্ধি হয়েছে—তাই লিখেছি ডায়েরির পৃষ্ঠায়, যেন এ ছাড়া আমার মনের অবসাদ বা উচ্ছল সময়ের কথা কেউ শুনতে পায় না, একমাত্র ছলহীন বিমোহিত শ্রোতা এ। খানিক এভাবেও বলা যায়— আজ বিষ্যুদবার বা বৃহস্পতিবার। যেমন আমার কতিপয় বৃহস্পতির দিনলিপি-কে কতিপয় বিষ্যুদবারের দিনলিপিও বলা যায়। তবু সেই একই বিষণ্ণতা থির দাঁড়িয়ে থাকে মাদরাসার বারান্দায়। পাঁচকলি টুপির সেলাই খুলে যাওয়ার মতোই বিষণ্ণ সেই দিন বা জুব্বার বুকপকেটে কলমের নিব ফেটে লেপ্টে যাওয়া কালির মতো দুরূহ কান্না। দিনলিপির পৃষ্ঠাগুলো আদতে নিজের সাথে বলা কথা— মুঠোফোনের সংলাপ, শেষ বিকেলে মন খারাপের মতো আরও যা আছে অসুস্থ দিনের উৎসব। নাপা ট্যাবলেট, প্লাস্টিক গ্লাসে পাউরুটি ভিজিয়ে খাওয়া দুপুর, বাকরখানি সন্ধ্যা।
আমি আতিক ফারুক। এছাড়া পরিচয় দেবার মতো বহুলতা আমার জানা নেই। পাঠকের প্রতি লেখকের বয়ান বা পাঠকের উদ্দেশ্যে কিছু বলবার শৈলী কিরকম হতে হয়—তা আমার জানা নেই। আমার প্রতিটি শব্দ বা বাক্যের রহস্য উদঘাটন করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই পাঠকের। আমার পরিচয় তো গদ্যের কালো হরফে, থমকে যাওয়া অনগ্রসর হেঁয়ালি গল্পের ভেতর বা গুরুত্বহীন কোনো রূপক চরিত্রের আদলে গড়ে ওঠা অন্ধ নাবিকের চোখে। যা-কিছু ভাবনার গহীন উপশিরায় তিড়বিড়ে চঞ্চলতা নির্মাণ করে—তাই যেন ফুটে ওঠে কিবোর্ডের শব্দে বা কাগজের পৃষ্ঠায়। দর্শন, ভ্রমণ, গদ্য, মুক্তগদ্য, কবিতা, আত্মজীবনী, ছোটোগল্প, উপন্যাস আমার আগ্রহের জায়গা। তবে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত পাঁচটি এবং প্রকাশিতব্য দুটি। এই সাতটি বইয়ের ভেতরই আমার চিন্তা-দর্শনের কিছুটা নাগাল পাওয়া যায়। কোনোকিছুই উন্নীত নয়, ঘটনা’কে কে কিভাবে নিচ্ছে সেটা তার দৃষ্টিকোণের উপরই ন্যস্ত। আট-ই অক্টোবরের দিনে, বন্যাকবলিত ঢাকার প্রতিবেশী গ্রামে আমার জন্ম। আবার হয়তো এমনই কোনো বিপন্ন ঢাকার গলিতে আমার মৃত্যু হবে। ততক্ষণে স্বাভাবিক যাপনের পথগুলো উন্মোচিত হয়ে আসুক।