আবুল মোমেন অন্তর্মুখী কবি। তাঁর কবিতায় ডুব দিলেই নদীর গভীরের অন্তপ্রবাহের মতো এক নিবিড় চলাচল অনুভব করি। আপাত স্থবির কিন্তু ধাবমান, শান্ত কিন্তু উষ্ণ, কোমল তবে দৃঢ় ও অবিচল তিনি প্রকৃতিমগ্ন তবে সমাজ ও সময়ের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছিন্ন যোগ। পুঁজির পেছনে দৌড়ানো ধোঁয়া, ধূলিময় যান্ত্রিক পৃথিবীর কোলাহলে আবুল মোমেনের কবিতা যেন নির্মল স্বচ্ছ আকাশ-পটে ফিরে আসা এক নিঃসঙ্গ ঈগল। আমাদের আত্মকেন্দ্রিক, যান্ত্রিক শীতল মনের অন্ধকারে আবুল মোমেন ছড়িয়ে দেন একধরনের রোদ। যার তাপের বিচিত্র নকশি আরামের হলে পাঠককে জড়িয়ে ধরে। করোনার সংঘনিরোধকালে স্থবির আতঙ্কগ্রস্ত এক ট্রমার দুনিয়াকে কবি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছেন । সেই বীক্ষণ উঠে এসেছে কবিতার চরণে চরণে। কোভিডের অনুজীবও সেখানের বাদ পড়েনি । আগন্তুক কিছু বেহায়া গোছের/ সোজা অন্দরে ঢুকে পিড়ি পেতে বসে নাসারন্ধ্রে/ টুপ করে ডেরা বাঁধে ফুসফুসে/ পাখিগাত্রে জন্ম তার, সুপ্তিকাল শেষে/ মানুষের স্নেহ পেয়ে/ মন দেয় বংশ বিস্তারে। সৃষ্টিশীলতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ এই কবিতার বই । ‘পাথর যখন চেপে ধরে' অতিমারীর সময়ের এক গীতিময় নান্দনিক ধারাভাষ্য।
জন্ম চট্টগ্রামে, ১৯৪৮ সনের ১৮ ডিসেম্বর। সাহিত্যের পরিবেশে বড় হয়েছেন। স্কুল ও কলেজ জীবন চট্টগ্রামে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব ঢাকায়। কবিতা, প্রবন্ধ এবং কলাম লিখছেন নিয়মিত। এছাড়া তিনি কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষা নিয়ে। এ সূত্রে শিশুশিক্ষা নিয়েও প্রচুর লিখেছেন, এবং এখনও লিখছেন।। অনেকেরই জানা নেই ১৯৭৫ থেকে তিনি ও শীলা মমামেনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে শিশু প্রতিষ্ঠান ফুলকি। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। তবে কবিতা তিনি কখনাে ছাড়েন নি। কবি শামসুর রাহমানের আশংকাকে আশীর্বাদে পরিণত করে আবুল মােমেনের কবিতাচর্চা এগিয়ে চলেছে। এটি আবুল মােমেনের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ। শিশু কিশােরদের জন্যে লেখা ইতিহাস বই বাংলা ও বাঙালির কথার জন্যে পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার। আর ২০১৬ সনে প্রবন্ধের জন্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।।