১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে দেশ দু’বার রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন হ’লেও তা আজও পাশ্চাত্য বস্ত্তবাদের করাল গ্রাস থেকে বের হ’তে পারেনি। ফলে তার কবলে পড়ে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন সিলেবাসে সুকৌশলে বস্ত্তবাদী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। তাদেরকে শিখানো হচ্ছে যে, এ পৃথিবী আল্লাহর সৃষ্টি নয়। বরং দূর অতীতে মহাবিশ্বে ঘটিত এক মহা বিস্ফোরণের ফলে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যাকে ‘বিগব্যাঙ’ বলা হয়। এতে আমাদের সন্তানরা জন্মগতভাবে ইসলামে বিশ্বাসী হ’লেও পরবর্তীতে নাস্তিক্যবাদী হয়ে উঠছে। ফলে তারা আল্লাহ ও আখেরাতে জবাবদিহিতার অনুভূতিশূন্য হয়ে যাচ্ছে এবং মানবতাহীন স্বার্থসর্বস্ব প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে। উক্ত থিওরী মাত্র ১৯২৭ সালে প্রকাশ পেয়েছে। অথচ সাড়ে ১৪শ বছর পূর্বেই কুরআন সে বিষয়ে বলে দিয়েছে। পার্থক্য এই যে, বস্ত্তবাদীদের ধারণা এই এক্সিডেন্ট বা মহাবিস্ফোরণ আপনা-আপনি হয়েছে। এর পিছনে কোন কর্তা নেই। পক্ষান্তরে ঈমানদারগণের দৃঢ় বিশ্বাস এটি আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়েছে (আম্বিয়া ২১/৩০)। এটি তাঁর মহা পরিকল্পনারই অংশ। যার ফলে পৃথিবীকে পৃথকভাবে মনুষ্য বাসোপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। পরিশেষে অত্র বই প্রকাশে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ও সহযোগী সকলকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ তাদেরকে ও মাননীয় লেখক এবং তাঁর পিতা-মাতা ও পরিবারবর্গকে ইহকালে ও পরকালে সর্বোত্তম জাযা দান করুন- আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।