বঙ্গবন্ধুর দর্শন, এককথায় যদি বলি―তা হলো ‘বাংলার মানুষের মুক্তি’; সামগ্রিক অর্থে সমষ্টিকে নিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি। সেই মুক্তির জন্য নিরলস সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়, বহু ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঞ্চিত মানুষের আশাভরসার প্রতীকে পরিণত হন; অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বাধীনতার ডাক দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময়ে তিনি সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একটি সময়োপযোগী আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য উন্নত প্রশাসনিক ব্যবস্থার যাত্রা তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক সকল বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে একটি শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বিভিন্ন ভাষণে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ নতুনভাবে জনকল্যাণমুখী করে সাজাতে একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় এমন কোনো প্রসঙ্গ নেই যে-বিষয়ে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তিনি রেখে গেছেন বাংলাদেশের সব উন্নয়নের শক্ত ভিত। মাত্র সাড়ে তিন বছরের দেশ পরিচালনায় অভাবনীয় উদ্যোগ ও সাফল্যের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ‘বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার: দেশ নির্মাণের মৌলিক রূপরেখা’ শীর্ষক গ্রন্থটি লেখক মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার এক অনন্যসাধারণ সৃষ্টি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালীন সরকারের সকল দিক তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। উপস্থাপন করেছেন প্রামাণ্য দলিল-দস্তাবেজ, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় জার্নাল এবং স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের লেখা পুস্তক-পুস্তিকার প্রাসঙ্গিক তথ্যসূত্র। নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা এবং অক্লান্ত শ্রমে তিনি বিপুল তথ্যসম্ভার সুবিন্যস্তভাবে এ গ্রন্থে উপস্থাপন করে বঙ্গবন্ধুর সরকারের মৌলিক রূপরেখা স্পষ্ট করেছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে যেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার একটি প্রতিচ্ছবি এখানে বিধৃত হয়েছে। এই পরম্পরায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান এবং আগামী দিনের গবেষক, চিন্তক, অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য এ গবেষণা দলিলটি দিকদর্শন হিসেবে কাজ করবে।