শাহবাগে অবস্থিত ন্যাশন্যাল পাবলিক লাইব্রেরির কেন্টিনে একদা এক বৈকালিক আড্ডায় আমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু খালিল জিবরানের জবানিতে জনৈক আরেজ আলী পাটোয়ারী সম্পর্কেজানতে পারি। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে বলতে গিয়ে খালিল জিবরান বলেন যে, আরেজ আলী পাটোয়ারী আগামসি লেনে তাঁর বর্তমান ঠিকানায় ১৯১২ সালের শীতকাল শুরুর একরাতে জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে ২০২২ সালের শীতকাল এলে তাঁর বয়স ১১০ বছর অতিক্রম করবে। এই তথ্য লাভপূর্বক রায়হান সৈকত মোবাইল ফোন সেটের ক্যালকুলেটর অপশনে গিয়ে যোগ-বিয়োগে মনোযোগ দেন। হিসাব মেলান। তারপর তিনি একজন বাঙালি আরেজ আলী পাটোয়ারীকে চলমানকালে বিশে^বেশি বয়সি মানুষ বলে দাবি করেন এবং উচ্ছ¡াসময় চিৎকার শুরু করেন। তবে তখন তার সে দাবিকে বাতিল ঘোষণা করেন মোহাম্মদ হানিফ। তিনি রায়হান সৈকতের উচ্ছ¡াসকে অবদমন-হেতু স্পেনের স্যাটার্নিনো দে লা ফুয়েন্তে গার্সিয়াকে পৃথিবীর বেশি বয়সি মানুষ বলে তথ্য সরবরাহ করেন। ফুয়েন্তের বয়স ১১২ বছর। তবে তখন মৃত ফুয়েন্তে গার্সিয়াকে জীবিত আরেজ আলী পাটোয়ারীর সাথে গুলিয়ে দেওয়ায় ফিরোজ আহাদ অট্টহাসি দিয়ে মোহাম্মদ হানিফকে পরিহাস করেন এবং উপস্থিত অন্যরা তখন তার অট্টহাসিকে অবজ্ঞা করতে পারেন না। আর হাসি তো সবসময় কোভিড-১৯ ভাইরাসের চেয়ে সংক্রামক। আমি তাদের এই অট্টহাসি ও পরিহাসকে অতি-যতেœ পরিহার করি। কারণ, জীবনের প্রতি প্রচÐ রকমের ভালোবাসা আমার সমস্ত শরীর-মনজুড়ে কুঁদে ফেরে। আমিও আরেজ আলী পাটোয়ারীর মতো শতবর্ষী কিংবা তাঁর অধিক জীবনলাভ করতে চাই। তাই খালিল জিবরানের জবানিতে আরেজ আলী পাটোয়ারীর জন্মসালের কথা শুনে রহস্যজনকভাবে আমি তাঁর সাক্ষাৎলাভের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পড়ি। বিশেষ করে তখন আমি আরো বেশি উদ্গ্রীব হয়ে পড়ি, যখন শুনি এই ভদ্রলোক বিপুল জ্ঞানী। আরেজ আলী পাটোয়ারীর সাক্ষাৎকার ৮ তিনি ইতিমধ্যে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ গ্রন্থ পড়ে নিয়েছেন এবং কেবল নিজের জন্য জীবন-জগৎ সম্পর্কিত অভিনব একটি দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে নিয়েছেন। আর এই বয়সে এসেও তাঁর স্মৃতি বৃষ্টিহীন জ্যৈষ্ঠ মাসের ধান্যক্ষেত্রের মৃত্তিকার মতো খরখরে এবং তাঁর এই দীর্ঘজীবনের অফুরন্ত স্মৃতি প্রতিনিয়ত তাঁকে খরস্রোতা নদীর বালুকাময় তটভূমির মতো সিক্ত করে তোলে। প্রতিনিয়ত দীর্ঘজীবনের কাক্সিক্ষত-অনাকাক্সিক্ষত সহস্রঘটনার দুর্দমনীয় অভিঘাতে তাঁর মনের গভীরে সেতারের তারের মতো বেজে চলে টুংটাং শব্দ-ব্যঞ্জনা। কখনো তিনি শুশুকের মতো স্নাত হন গভীর অহংকারে। কখনো কষ্ট তাঁর গলায় টেংরামাছের শক্ত কাঁটার মতো বিঁধে যায়। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে খালিল জিবরান আমাকে সময় দিতে পারেননি। আবার আরেজ আলী পাটোয়ারীর বাড়ির নম্বর মনে না-থাকায় নিশ্চিত ঠিকানা দিয়ে তার সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি।