ফ্ল্যাপে লিখা কথা ১৭৮৯ সাল। কেপ টাউন। লেপটেন্যান্ট ইউরি ফিওদরভিচ্ লিসিয়ান্স্কি তাঁর ডায়রিতে বিরক্তিভরে লিখে রাখলেন: ‘ইনি ছন্নছাড়া অবস্থাতেই ইউরোপ হইতে চলিয়া গিয়াছিলেন ও আবিকল পূর্বাচস্থাতেই ভারতবর্ষ ত্যাগ করিয়া আসিলেন।” কে এই ছন্নছাড়া? লিসিয়ান্স্কি কথন কল্পনাও করতে পারেননি যে রাশিয়ার বিজ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে ঐ প্রৌঢ়, গেরসিম লিয়েবেদফ,তাঁর মতোই অমরতার বিজয়মুকুট পরে থাকবেন। শুধু রাশিয়ার সমাজেতিহাসে নয়, বঙ্গসংস্কৃতির ইতিহাসেও।
বাংলা নাটমঞ্চের জন্মদাতা উক্ত প্রবাদপুরুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনী ও অক্ষয় কীর্তির প্রামাণ্য বিবরণ এতদিনে রচিত হলো। সেই সঙ্গে বাংলা-রুশ সাংস্কৃতিক সম্পর্কবিনিময়ের আদিপর্বের ইতিহাসও । প্রায় তিন দশক পূর্বে সম্পন্ন এই রচনা অদ্যাবধি পথিকৃতের আসন অধিকার করে আছে। ভবিষ্যতে যতদিন না নতুন কোনো তথ্য উপাত্ত ইত্যাদি আবিষ্কৃত ও সংগৃহীত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান গ্রন্থ লিয়েবেদেফ্ সম্পর্কে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও একমাত্র প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে থাকবে।
রুশ ভাষায় অভিজ্ঞ গবেষক, অনুবাদক ও কবি হায়াৎ মামুদ এই প্রথম মূল উৎস ব্যবহার করে বঙ্গীয় বিদ্বৎসমাজে গেরাসিম্ স্তেপানভিচ্ লিয়েবেদেফ্কে সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত করলেন।
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মৌড়া নামে আখ্যাত এক গ্রামে, ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে । ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যন্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস । স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্ৰায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্ৰগতি প্ৰকাশনে, মস্কোয়-সুদূর ও স্বপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নে বসে । দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার-প্ৰথমে কলেজে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে । বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন শিশুসাহিত্যে । দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ আছে । সমালোচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ষাটেরও বেশি।