গাড়িতে বসেই অপেক্ষা করছিলেন প্রফেসর। আমি উঠে প্রথমেই জানতে চাইলাম, আজ কোন অরণ্যে নিয়ে যাবে আমাকে? ঠোঁট টেপা মুখে স্বভাবসুলভ রহস্যময় জবাব, চলো, আজ তোমাকে স্বর্গ নরক, দুটোই দেখিয়ে নিয়ে আসি। প্রফেসরের চোখ আমি দেখতে পাচ্ছি না। কালো বড় চশমায় মুখের অর্ধেকটা ঢাকা। পুরা মুখ দেখেও যাকে বুঝতে পারি না, অর্ধেক মুখ দেখে কী করে বুঝব, কী চলছে তাঁর মনের ভেতর? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে, কে জানে? ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরেছেন প্রফেসর। ব্লু জিনস। কালো শার্ট। হাঁটুর নিচ পর্যন্ত তোলা সফট লেদার বুট। স্কার্ফ পরেননি আজ। তুষার শুভ্র বুকের অনেকটাই উন্মোচিত। হাতছানি দিচ্ছে চোখধাঁধানো কাঞ্চনজঙ্ঘা! মধ্যিখানে হিমশীতল গিরি খাদ। নেমে গেছে নিচে পিচ্ছিল উপত্যকায়। একবার হারিয়ে গেলে নিজেকে খুঁজে পাব না আর। আতঙ্কে আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। এ কদিনে প্রফেসরের স্বভাব কিছুটা হলেও চিনে গেছি আমি। তাই জবাব শুনে খুব একটা অবাক হলাম না। তবে কেন জানি না, আজ আর কোনো সংশয়, কোনো সংকোচ করছে না আমার ভেতর। আমি যেন এক দ্বিধাহীন মুক্ত বিহঙ্গ। ডানা মেলেছি আকাশের নীলে। মনে মনে বললাম, নন্দিনী, রহস্যময় এ লুকোচুরি খেলায় আর হারাতে পারবে না আমাকে। কিছুটা হলেও জেনে গেছি, “পুরুষকে কী করে বানাও পোষা পাখি। ঝর্না দেখাবে, কখনো তার উৎসের চাবি খুলবে না”। আমিও শুভংকরের মতোই দুঃসাহসী হয়ে উঠলাম।