সংসার জীবনের শুরুতেই আকস্মিকভাবে ভুটানে যাওয়ার ডাক এলো। সেই নব্বই দশকের প্রথম ভাগে না ছিল ভালো টেলিযোগাযোগমাধ্যম না ইন্টারনেটের যুগ। স্বামীর পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে তবুও পরিবার-পরিজন রেখে ভারাক্রান্ত মনে যেতে হয় ভুটানে। কখনো কখনো জীবনে অলৌকিক কিছু ঘটে আর তা আপন ইচ্ছের বিরুদ্ধেই। ভুটানে যাওয়াটা আমার জীবনে সেই অলৌকিক প্রাপ্তি হয়েই দেখা দেয়। আমি যখন কোনো স্থান ভ্রমণ করি, তখন তা অন্তর্চক্ষু দিয়েই দেখার চেষ্টা করি। আর যদি তা কোনো দেশ হয় তাহলে সেখানকার প্রকৃতির সাথে দেখি সেই দেশের সমাজব্যবস্থা-সংস্কৃতি, সর্বোপরি মানুষকে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই ভুটানকে নিয়ে লিখলাম। ১৯৯১ সালে ভুটান যাই; ছিলাম ১৯৯৪ সাল অবধি। সেই ভুটানকে নিয়ে লিখলাম ২০২২ সালে এসে। হয়তো বহু স্মৃতি তামাদি হয়ে গিয়েছে, হয়তো বহু কিছু বদলেও গিয়েছে। জীবনের ব্যস্ততায় সময় হয়নিকো সে স্মৃতি রোমন্থনের। ২০১৮ সালে আবারও ভুটান ভ্রমণের সময় মনে হলো এবার লিখে ফেলি ভুটানের কথা। অনেকেই এখন ভুটান ভ্রমণ করছেন। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি সেই ২৪ বছর আগে থেকে আজকের সময় পর্যন্ত দুই মলাটে আবদ্ধ করার। মূলত প্রবাস জীবন হলেও তাতে ভ্রমণ কাহিনির ছোঁয়াও আছে, আছে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজ ও রাষ্ট্রকে তুলে ধরার প্রয়াস। এ কাহিনি লিখতে সর্বতোভাবে যারা সাহায্য করেছেন তাদের মধ্যে আছে দুই সন্তান শার্লট ও আনুশকা। তার সাথে আছে তাদের বাবা মেজর জেনারেল কাজী ফকরুদ্দীন আহমেদ। কিন্তু যে গল্পের সমাপ্তিই টানতে পারতাম না যদি না লেখক, সংগঠক স্বপন মিয়া নামের তরুণটি আমার পাশে না দাঁড়াতো। মাতৃহারা এই ছেলেটি আমার মতো মানুষকে মাতৃজ্ঞানে ভক্তি করে। সার্বক্ষণিক উৎসাহ দিয়ে বোনদের পাশেই থাকে। এদের কাউকে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে শেষ করতে পারবো না!
ফারাহ্ আজাদ দোলন-এর জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ সালে রাজশাহীতে। পিতা: মোল্লাহ্ আবুল কালাম আজাদ, মাতা: আর্শেদা খানম। শৈশব কেটেছে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় আত্রাই নদী তীরের গ্রাম আহসানগঞ্জে। এই শৈশবের আনন্দ-বেদনার স্মৃতি, নদী আর অপরূপ প্রকৃতি আজীবন তাড়িত করেছে তাঁকে। স্বাধীনতা পরবর্তী কৈশোর জীবন কেটেছে রাজশাহী শহরে। শিক্ষাজীবন কেটেছে রাজশাহী সরকারি পিএন গার্লস স্কুল, নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সমাজবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রি নিয়েছেন। এরপর ১৯৮৭ সালে বিয়ের পর বিভিন্ন সেনানিবাসসহ ঢাকা সেনানিবাসে জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন। স্বামীর কর্মসূত্রে ভুটানে প্রবাস জীবন কাটান কিছুকাল। পরর্বতী জীবনে আঁলিয়াস ফ্রাঁসেস থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ তার একমাত্র বাসনা। ছবি আঁকা তাঁর অন্যতম শখ। "ড্রাগন রাজার দেশে" বইয়ের প্রচ্ছদের তেলচিত্রটি তাঁর নিজের আঁকা। স্বামী মেজর জেনারেল (অব.) কাজী ফখরুদ্দীন আহমেদ, এসপিপি, পিএসসি। দুই মেয়ের বড়োটি ডাক্তার, ছোটোটি আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার। লেখকের অন্য বইগুলো ‘বিদ্যাপীঠ ও বিদ্যাগুরুগণ’ এবং ‘বৈচিত্র্যময় দুটি আরব’। প্রথমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর লেখা, দ্বিতীয়টি দুটি দেশের ভ্রমণকাহিনি একত্রে লেখা।