ফ্ল্যাপে লিখা কথা স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে অর্থনীতির ওপর বাংলা ভাষা লেখালেখিতে যে ক’জন সুনাম অর্জন করেন তাঁদের মধ্যে ড. রমণীমোহন দেবনাথ নিঃসন্দেহে অন্যতম। গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে তাঁর সম্পাদিত দৈনিক সংবাদ এর ‘ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতির’ পাতাটি স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গ্রন্থ হিসেবে বাংলা ভাষায় বিপণনের ওপর লিখিত তাঁর বিপণন নীতিমালা ও বাংলাদেশের বিপণন গ্রন্থটিই এ দেশে প্রথম। বাঙালির ব্যবসার ওপর তিনি নজর রাখছেন বহুদিন ধরে। তাঁর ‘ব্যবসা ও শিল্পে বাঙালি’ এবং বাঙালির ব্যাংক ব্যবসা অনুসন্ধানী দৃষ্টির ফসল।
যদিও অর্থনীতির কোন জনপ্রিয় বিষয় নয়। অথচ তা ধনী-দরিদ্র সকলকে প্রভাবিত করে। মানুষ বুঝতে চায় কিসে কী হচ্ছে । বুজতে চায় বাজেট, কর , কালো টা্কা, সঞ্চয়পত্র, বাজার ও বিনিয়ো ইত্যাদি বিষয়সহ অনেক বিষয়। পাঠকদের আগ্রহ ও কৌতুহল এ ক্ষেত্রে প্রচুর । কিন্তু এসবের ওপর সহজবোধ্য গ্রন্থের অভাব প্রকট। লেখক অত্যন্ত যত্ন সহকারে এই অভাবটুকু বর্তমান গ্রন্থে পূরণ করেছেন। এই গ্রন্থে স্থান পাওয়া প্রতিটি প্রবন্ধ যেমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লেখা, তেমনি তথ্যসমৃদ্ধ। লেখক কঠিন বিষয়গুলোকে পাঠকের কাছে বোধগম্য করে উপস্থাপিত করেছেন। এসে বিশেষজ্ঞ অভিমত যেমন আছে তেমনি আছে জনগনের কথা। লেখক অর্থনীতির উপর বাংলা লিখেছেন চার দশক ধরে। প্রতিটি লেখায় তাঁর মুন্সিয়ানা ধরা পড়ে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি মানবকল্যাণমুখী। বাজার অর্থনীতির ও উন্নয়নের স্ববিরোধিতাগুলো তুলে ধরেছেন অসামান্য দক্ষতায়। দারিদ্র্য, অসাম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, আয়-বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে বাংলাদেশ আজ দ্বৈত অর্থনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ-একটি গরীবের অর্থনীতি, আরেকটি ধনীর অর্থনীতি। দেখিয়েছেন বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে দুই ভাগে বিভক্ত একটি অপেক্ষাকৃত ধনী পূর্বাঞ্চল এবং অন্যটি গরীব পূর্বাঞ্চল। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সমাজ, মানুষ ও অর্থনীতি কিভাবে বদলাচ্ছে তার একটি চিত্রও তিনি গ্রন্থে এঁকেছেন। পাশাপশি প্রতিটি নিবন্ধে রয়েছে শিক্ষকসূলভ অন্তর্দৃষ্টি, ব্যাংকারসুলভ বিশ্লেষণ। সহজবোধ্য প্রতিটি প্রবন্ধই পাঠকদের ভাল লাগবে আশা করি। সাধারণ পাঠক, বিশেষজ্ঞ পাঠক ও আলোকিত পাঠক সবাই কিছু না কিছু ভাবনার খোরাক পাবেন পাঠকের উপযোগী করে লেখা এই গ্রন্থে । অর্থনীতি বিষয়ে লেখা বইয়ের জগতে বর্তমান গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে অন্যতম।