ফ্ল্যাপে লিখা কথা ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১) বহুমাত্রিক এই মনীষী শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানসাধক, দাবাড়ু, সংগীত সমঝদার, সাহিত্যসেবী-নান অভিজ্ঞানে চিহ্নিত। তাঁর জীবন পরিধি রাঙালি সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়কে স্পর্শ করেছে। রাজনৈতিক আন্দোলন ও উত্থান-পতন, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও বিবর্তন এবং সামাজিক রূপান্তরের তিনি এক অন্তরঙ্গ সাক্ষী। ছিলেন বুদ্ধির মুক্তি-আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এর মুক্তদৃষ্টি ও কল্যাণবুদ্ধির প্রভাব ও প্রেরণা ছিল তার সারাজীবনের পাথেয়। বাংলা ভাষা ও হরফ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র কিংবা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রবীন্দ্র-বর্জন ও বিদূষণ, সরকারের সংবাদপত্র-সংকোচন নীতি এ সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। ফ্যাসিবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সচেতন ও বিবেকী বুদ্ধিজীবীর কর্তব্য পালন করেছেন। বাঙালির পর্যায়ক্রমিক মুক্তির আন্দোলনেও তাঁর চেতনাগত অংশগ্রহণ ও নৈতিক সমর্থন ছিল।
কাজী মোতাহার হোসেন লেখক হিসেবে বিচিত্র বিষয়ের চর্চায় ছিলেন নিবেদিত । মূলত সমাজভাবুক মননশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি পরিচিত হলেও বিজ্ঞান-দর্শন-ধর্ম এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তার পরিচয় মেলে নানা রচনায়। প্লেটো কিংবা হিন্দি কবিতার অনুবাদেও তাঁর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর আছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধ-সংকলনম ‘সঞ্চরণ’-এর প্রশংসা করেছিলেন ‘স্বচ্ছ প্রাঞ্জল ভাষা’, ‘বলবার সাহস’ ও ‘চিন্তার স্বকীয়তা’র জন্য । বিজ্ঞান-পঠন-পাঠনের সুবাদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু, প্রফেসর প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ প্রমুখের সঙ্গে। সাহিত্য আর অন্যান্য সূত্রে স্নেহ-প্রীতি-সখ্য অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র-নজরুলের।
তাঁর ১১০তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে জকাজী মোতাহার হোসেন ফাউণ্ডেশন-এর উদ্যোগে বর্তমান গ্রন্থের পরিকল্পনা। সমকাল ও উত্তরকালের মানুষের স্মৃতি-শ্রুতি-মূল্যায়নের নানা কৌণিকে মোতাহার হোসেন এখানে উপস্থিত। ব্যক্তি-মানুষ এবং সেইসঙ্গে লেখক-ভাবুক মোতাহার হোসেনের অন্তরঙ্গ পরিচয়ের সন্ধান মিলবে ‘কাজী মোতাহার হোসেন : জীবন ও সৃষ্টি’ নামের এই বইয়ে।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।