ভারতের বিগত দিনের দাঙ্গাগুলো ছিল বেসরকারি দাঙ্গাবাজদের দ্বারা পরিচালিত। গুজরাটের গোধরাকেন্দ্রিক দাঙ্গা কিন্তু বেসরকারি দাঙ্গা নয়, বরং সরকারি হত্যাযজ্ঞ । শতসহস্র মানুষের আবেদন নিবেদন নির্দেশ ও আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে কলম ধরতে হলো আমাকে । পুস্তকটির আলোচ্য বিষয় হলো, মুসলমান শাসনকাল হতে ব্রিটিশ শাসনকাল এবং ব্রিটিশকাল হতে শক্তির হস্তান্তর দিবস পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট এবং তারপর হতে আজকের গোধরাকাণ্ড—এই দীর্ঘ সময়ে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ হত্যাযজ্ঞ দাঙ্গা আর হানাহানির বিবরণ জানানো হয়েছে দাঙ্গাগুলোর গতিপ্রকৃতি, কোন্ কোন্ সালে কোথায় দাঙ্গা হয়েছে, তাতে মোট কত আহত-নিহত হয়েছেন, সম্পদ সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, দাঙ্গা লাগার প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ ইত্যাদি আরও জানানো হয়েছে ওই সমস্ত দাঙ্গাবাজদের সপক্ষে ও বিপক্ষে কাদের কী ভূমিকা ছিল, আর এ সমস্ত বিধ্বংসী দাঙ্গার প্রেক্ষিতে প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবী, পত্রিকা সম্পাদক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, কবি এবং সুপ্রতিষ্ঠিত স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ঐতিহাসিকদের সমীক্ষা, সমালোচনা, পর্যালোচনা, নির্দেশ ও উপদেশের কথা । এতে আরও আছে মুসলিম সমাজের মনের গভীরের অপ্রকাশিত গোপন কথা। আর একটি চিত্তাকর্ষক বিষয় 'হিন্দু ও হিন্দুত্বের উৎস, অবস্থান ও পরিণতির কথাও আলোচিত হয়েছে। এই নাতিদীর্ঘ পুস্তকটি আপনার চিন্তাভাবনার সুদীর্ঘ পথে নৈরাশের অন্ধকারে কিছুটা হলেও আলো বিকিরিত করতে পারবে বলে বিশ্বাস।
ইতিহাসবিদ আল্লামা গোলাম আহমাদ মোর্তজা: ইনি হলেন সেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মহান ব্যাক্তি গোলাম আহমদ মোর্তাজা যার বই এবং তাকরিরের মাধ্যমে মানুষ হাজারো ইতিহাস জানতে পেরেছে। গোলাম আহমাদ মোর্তজা জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের'র বর্ধমান জেলার মেমারিতে। তিনি একজন বক্তা,গবেষক ও লেখক। তিনি দুই বাংলার অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন পলাশীর যুদ্ধ,অন্ধকূপ হত্যাকান্ড, মহামতি আকবরের কথা এমনি অনেক নতুন তথ্য তিনি প্রমাণসহ পেশ করেন। যা আসলে আমরা যেভাবে জানি সেভাবে বলা হয়নি। তাঁর পুস্তক পাঠে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পড়ে যায় পাঠক, কিন্তু গোলাম আহমাদ মোর্তজা এমনভাবে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তাতে তাকে মেনে নিতে হয়েছে ভারতের বর্তমান ঐতিহাসিকদের। বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা তার তথ্য মেনে নিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দেন যা চাপা পরে ছিলো ইতিহাসের পাতায়। তিনি সেগুলোকে সামনে তুলে আনার চেষ্টা করেন। তাকে নিয়ে এ পর্যন্ত ভারতে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তিনি বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনি "বক্তা সম্রাট' নামে পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর কয়েকটি ইতিহাসের বই ও ইতিহাস ভিত্তিক বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে। ইতিহাসের ইতিহাস, চেপেরাখা ইতিহাস,বাজেয়াপ্ত ইতিহাস,পুস্তক সম্রাটসহ অনন্য ইতিহাসের বইয়ের মাধ্যমে তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন। ভারতের গতানুগতিক ইতিহাস বিষয়ক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে মুসলিমদের নিয়ে লিখিত বিভিন্ন তথ্য তিনি বানোয়াট দাবী করেন। সেই তথ্যগুলোর বিরোধীতা করেন এবং সেগুলো মিথ্যা তথ্য তিনি প্রমাণসহকারে খণ্ডন করার চেষ্টা করেন এই গ্রন্থ গুলোতে। পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ,গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায়,হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,দেবেন্দ্ররনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে সমালোচনা করেন এবং তাদের চাপা পরা ইতিহাস সামনে তুলে এনে প্রমাণসহকারে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের সরকার ১৯৮১ সালে তাঁর একটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর তিনি একেরপর এক ইতিহাসের বই প্রকাশ করতে থাকেন,যার সিংহভাগ বই'ই সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সরকার বাতিল করেন। তাঁর উপর সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনায় গোলাম আহমাদ মোর্তজা তাঁর "বাজেয়াপ্ত ইতিহাস" গ্রন্থে এর প্রতিবাদ করেন। আল্লাহ তায়ালা হযরতের নেক হায়াত দারাজ করেন এবং মানুষের সামনে বই আকারে হোক অথবা ওয়াজ, বক্তৃতা মাধ্যমে হোক সত্যকে উন্মেচন করার তৌফিক দান করুন।