আরবী ভাষা কুরআনের ভাষা, আরবী ভাষা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ও সুন্নাহের ভাষা। কুরআন ও হাদীসেই সংগৃহীত হয়েছে আমাদের জীবন পরিচালনার সব রকম বিধি-বিধান। কুরআন ও হাদীস আমাদের জীবন পরিচালনার পাথেয়। কুরআন-হাদীস থেকে বিধি-বিধান জেনে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হয়। কুরআন ও হাদীস যেহেতু আরবী ভাষায় লিখিত, তাই এ দুটি বিষয় অধ্যয়ন করতে হলে আরবী ভাষা শিক্ষার বিকল্প নেই। এই মহৎ উদ্যোগটি সামনে রেখে আমরা “আসাসুল আরাবিয়্যাহ” গ্রন্থটি রচনায় প্রয়াস পাই। যা “সাকাফী নেসাব” এর অন্যতম পাঠ্যগন্থ। বাংলাদেশে আরবী ভাষা শিক্ষার দুটি ধারা রয়েছে। একটি ধারা প্রথমেই ব্যাকরণ শিক্ষা দেয়, তারপর ভাষা। আরেকটি ধারায় প্রথমে ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়, তারপর ব্যাকরণ। এতে উভয় ধারার ছাত্রদের মাঝেই আরবী ভাষা ও ব্যকরণগত দুর্বলতা থেকে যায়। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের এ নেসাবে “আসাসুল আরাবিয়্যাহ” কিতাবটির মাধ্যমে আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ (নাহব, সরফ) একই সাথে শিক্ষা দেওয়া হয়। তাই আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই আরবী ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠে। এ পদ্ধতির স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন শাইখুল কুরআন হযরত মাওলানা কারী বেলায়েত হুসাইন রহিমাহুল্লাহ। যিনি কুরআনের তেলাওয়াতকে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিলো, যেভাবে তিনি কুরআনের তেলাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন, সেভাবে কুরআনের ভাষা, কুরআনের অর্থও প্রতিটি মুসলিমের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়া হোক। যাতে করে প্রতিটি মানুষ কুরআনের অর্থ বুঝে মর্ম উদ্ধার করে কুরআন তেলাওয়াতের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারে। হযরতের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই ১৯৯২ খ্রি. থেকে আজ পর্যন্ত সেই গবেষনা করে চলেছেন হযরতের স্নেহধন্য শাগরিদ আল্লামা সাইয়েদ আহমাদ সাইদ দা.বা.।
সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছর যাবত গবেষনা করছেন আরবী ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। ভাষা শিক্ষার সহজিকরণে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। স্বপ্ন দেখেন, একদিন প্রতিটি মুসলমান আরবী ভাষায় কুরআন হাদিসের মর্ম বুঝতে সক্ষম হবে। ২৮ শে নভেম্বর ১৯৬৬ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মুজাহিদপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ আলী আফজাল মুজাহিদপুরী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন দেশবরেণ্য বুজুর্গ ও অলিকুল শিরোমণি, মুফতিয়ে আজম ফয়জুল্লাহ রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা। লেখকের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সূচনা হয় বাবার প্রতিষ্ঠিত মুজাহিদপুর মাদরাসায় শাইখুল কুরআন হযরত মাওলানা ক্বারী বেলায়েত হুসাআন রহ.-এর হাতে। এরপর উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য পাড়ি জমান ট্টগ্রামের মেখল মাদরাসায় এবং হাটহাজারীতে থেকে ১৯৯১ সনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম হওয়ায় উস্তাদদের বিশেষ দোআয় ধন্য ছিলেন। তাইসির জামাতে পড়াকালীনই ফার্সী ও উর্দূতে নিয়মিত কবিতা লিখতেন। যা তৎকালীন দেশীয় পত্রপত্রিকাসহ বহিঃবিশ্বের বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নাহবেমীর জামাত থেকেই তিনি আরবীতে লেখালেখি শুরু করেন। হাটহাজারীতে শাইখুল আদব হযরত মাওলানা হারুন সাহেব রহ. ও হযরত মাওলানা সাজেদুর রহমান দা.বা.-এর হাতে উচ্চতর আরবী ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষা লাভ করেন। সে সময়কার তার লিখিত উসতাজে মুহতারাম প্রদত্ত বাংলা, উর্দূ, ফার্সী তাকরীরের আরবী নোট গুলো এখনো অনেক মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সহায়ক হিসেবে অধ্যয়ন করে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সমাপ্ত করার পর শাইখুল কুরআন হযরত মাওলানা ক্বারী বেলায়েত হুসাইন রহ. এর সোহবতে শিক্ষাক্রম বিষয়ক গবেষনা শুরু করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর তাঁর সান্নিধ্যে থাকাকালীন বহু কিতাবাদী প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেন। এরপর নিজের পিতার প্রতিষ্ঠিত মুজাহিদপুর মাদরাসায় অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের একাডেমিক অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করে নিজের মতো করে ছাত্রদের পাঠদানে মনোনিবেশ করেন। লেখকের এই গবেষণা একটি সয়ংসম্পূর্ণ সিলেবাসে রূপ ধারন করে। যা পরবর্তীতে "সাকাফী নেসাব" নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সাকাফী সিলেবাসের মাধ্যমিক স্তর বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরে শতাধিক মাদরাসায় পাঠদান করা হচ্ছে। লেখক তার গবেষণাকর্ম আরো বেগবান করতে রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন "মারকাযুস সাকাফা আল-ইসলামিয়া”। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত তিনি শিক্ষার্থীদের অনন্য এক ধারায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষা দিয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৪ টি।