ফ্ল্যাপে লিখা কথা বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জওশন আরা রহমানের কর্মময় জীবন। প্রথমে নারী-উন্নয়ন কর্মসূচি প্রধান এবং পরবর্তীতে প্রোগাম-প্ল্যানিং সেকশনের প্রধান হিসেবে ইউনিসেফে সাড়ে সতেরো বছর কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেন। এসব কর্মসূচিতে নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে তাঁর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এই সুদীর্ঘ সময়ে নারী উন্নয়ন এবং শিশু অধিকার বিষয়ের তার বিভিন্ন লেখা দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপানো হয়। এর আগে তৎকালীন সমাজকল্যাণ বিভাগে সাড়ে আঠারো বছল বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৬০ সালে চট্রগ্রামে শহর সমাজকল্যাণ অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ সমাজকল্যাণ ‘মাদার্স ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে ইউনিসেফে যোগদান করেন।
তিনি লেখাপড়া, প্রশিক্ষণ, কনফারেন্স ইত্যাদিতে যোগদানের জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার প্রায় ত্রিশটি দেশ ভ্রমণ করেন।
১৯ অক্টোবর ১৯৩৬ , চট্রগ্রাম জেলার তৎকালীন সাতকানিয়া থানার চুনতী গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুন্সেফ পরিবারে তার জন্ম । ১৯৫২ সালে চট্রগ্রাম শহরের বিখ্যাত ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। বিয়ের পর নিয়মিত লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। চট্রগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৫৫-১৯৫৬ সালে চট্রগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে কলেজের বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘অন্বেষা’ সম্পাদনা করেন। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রী সংসদের চট্রগ্রাম জেলা শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে বিএ পাস করেন। সমাজকল্যাণ বিভাগে চাকরিতে থাকাকালীন ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে কলম্বোপ্ল্যান স্বলারশীপ নিয়ে দু’বছরের জন্য নিউজিল্যান্ড যান। ওয়েলিংটনে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সোস্যাল সায়েন্স-এ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে চাকরিরত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল ওয়েলফেয়ার থেকে এমএ পাস করেন। অক্টোবর ১৯৯৬, ইউনিসেফ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে কনসালটেন্সি এবং বিভিন্ন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত থেকে সময় কাটান। ১৯৯৭-২০০২ সালের পাঁচ বছর মেয়াদী ‘National Action Plan for Children' প্রণয়নে তিনি টিম-লীডার হিসেবে কাজ করেন । বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘নারী উন্নয়ন’ এবং পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘শিশু উন্নয়ন’ ম্যাক্রো চ্যাপ্টার সংযোজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি গ্রামীণ ট্রাস্টের উপদেষ্টা , গ্রামীণ-শিক্ষা পরিচালনা পরিষদের সদস্য, গণবিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ট্রেজারার, কেমপেইন ফর পপুলার এডুকেশন এর স্পনসারশীপে প্রকাশিত বাৎসরিক ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট’ এর এডভাইজরি বোর্ডের সদস্য। এছাড়া বহুবিধ উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত আছেন।