ছোট্ট বন্ধু আমার, গল্পের শুরুটা দেখে যদিও মনে হচ্ছে যে এই বইটি সাইহার জন্য কিন্তু আসল কথা হলো, গল্পটা সাইহা, আইয়ান আর সব ছোট্ট বন্ধুদের জন্য। সাইহা তো আর একা না। সাইহা যখন আইনী আম্মুর বুকের ভেতর চলে এলেন তখন একই সময়ে সাইহার আরও এত এত বন্ধু ওদের আম্মুর বুকের ভেতর আর আব্বুর বুকের ভেতর চলে এলেন, তাই না? সেজন্য মাঝে মাঝে গল্পটিতে সাইহামণিকে ডাকাডাকি করলেও আসল কথা হলো এই গল্পটা সব ছোট্ট ছোট্ট সাইহা, আইয়ান আর ওনাদের সব বন্ধুদের জন্য। তো, সাইহা তো একদিন টুকুস করে আম্মুর বুকের ভেতর থেকে কুটুস করে উঁকি দিয়ে পুটুস পুটুস করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন। তাঁর পুটুস পুটুস কুটুস কুটুস তাকানো দেখে আব্বুর হলো আনন্দ। আব্বু বলে উঠলেন : ‘বাবা আমার, মা আমার, আটন পাখি আমার, ঘুঘু পাখি আমার, তুমি এবার আমার বুকে আসো।’ সাইহা আম্মুনির বুকের ভেতর থেকে বেশ মজা করে আব্বুকে দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এবার তাঁর মনে হলো, তাই তো এবার আব্বুর বুকে গিয়ে, তারপর তাঁর কাঁধের ওপর গালটা লাগিয়ে ইতি-উতি এদিক-সেদিক দেখতে আরো বেশি ভালো লাগতে পারে। যেই চিন্তা, সেই কাজ। সাইহা দুই হাত বাড়িয়ে টুপুস করে আব্বুজির কোলে ঝাঁপ দিলেন। এবার তো আব্বু খুশিতে বাগবাগ। এরপর সাইহামণি আব্বুর কাঁধে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে কিছুটা সফল হয়ে ওনার গালটা আব্বুর বাম গালের সাথে ঠিক ঠিকমতো লাগিয়ে আরাম করে আশপাশ দেখতে শুরু করে দিলেন। তাঁর মনে তখন কত বুদ্ধি! কত প্রশ্ন! তো, এই যে সাইহা টুনটুনি আম্মু, আব্বুকে পেলেন, এখন প্রশ্ন হলো, আম্মু, আব্বুকে পেলেন কীভাবে? হুম, তাই তো! আম্মুকে তো পেলেন বুবু আর ভাইয়া। বুবুকে তো বুবুর আব্বু, সাইহামণির ভাইয়া এত্ত এত্ত চুমু খেয়েছেন। বুবু যে সাইহার জন্য লাল টুকটুকে জামা কিনে দিলেন আর দোতলা একটা কট কিনে দিলেন ওর ঘুম দেবার জন্য, এই বুবুকে পাওয়া গেল কোথা থেকে? ভাইয়া তো সাইহা আম্মুর বুকে আসার আগেই কোথায় যেন চলে গেলেন। সাইহার জন্য তাই তিনি কোনো কিছুই নিজে নিজে নিয়ে আসতে পারলেন না। উনি নাকি আগেই আল্লাহ্র কাছে চলে গিয়েছিলেন। আর আল্লাহ্ নিশ্চয়ই অনেক জরুরি কোনো কারণে সাইহা আসার আগেই ভাইয়াকে তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন। এ কথা ভেবে সাইহামণির মন কেমন কেমন করতে লাগল। যাই হোক, এখন মন ভালো করতে হবে আর কঠিন কথাগুলোর বিষয়ে পরে ভাবা যাবে। ছোট মনে অনেক ছোট, কিন্তু গভীর ভাবনা আসে। দিন যেতে যেতে, বড় হতে হতে ভাবনাগুলোর সহজ আর সুন্দর উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়।