‘প্রিয়ভাষিণী’ একই সাথে সামাজিক ও রোমান্টিক দুই জনরার উপন্যাস হওয়ার দাবী রাখে। উপন্যাসের মূল চরিত্র ‘মারিয়াম’। এখানে মারিয়ামকে একজন আত্মমর্যাদাশীল নারী হিশাবে দেখানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওর জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে। জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে মারিয়াম জীবনের নতুন রঙ খুঁজে পায়। ওর জীবনে পছন্দ অপছন্দেরও আমূল পরিবর্তন ঘটে। নিজের মানসিকতার সাথে মিলে যায় এমন একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিশাবে আশা করলেও ঠিক বিপরীত চরিত্রের অধিকারী জুনায়েদের সাথে মারিয়ামের বিয়ে হয়। মায়ের পছন্দে মারিয়ামকে বিয়ে করে জুনায়েদের প্রথমদিকে মারিয়ামকে পছন্দ না হলেও ধীরে ধীরে ও মারিয়ামের ব্যক্তিত্ব, বিচক্ষণতা, দায়িত্বশীলতা ও মায়াবী চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। শুধু জুনায়েদ না, মারিয়াম খুব সহজেই ওর আশেপাশে থাকা মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বইটাতে সমাজের নানারকম সমস্যা তুলে ধরে সুচারুভাবে তার সমাধানের পথ দেখানো হয়েছে।রাজনীতির কবলে পড়ে দূষিত হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবক্ষয় ঘটেছে শিক্ষকদের মূল্যবোধের। তারপরও সমাজের অবক্ষয় রোধ করতে কেউ কেউ বদ্ধ পরিকর থাকে। মারিয়ামের বাবা সিরাজুল ইসলাম ছিলেন তেমনি একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক যিনি দীর্ঘদিন তার প্রতিষ্ঠানকে নিষ্কলুষ রাখার চেষ্টা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়েছেন তবুও অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে দিন দিন যেভাবে পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে তাতে আগামী সমাজ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে কিনা তা এখন ভাববার বিষয়। এই বইয়ে উল্লেখিত দু’একটি ঘটনার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে বিচ্ছেদ নয়, সমঝোতার মাধ্যমে সংসার টিকিয়ে রাখার মধ্যেই আছে সুখ, শান্তি এবং সৌন্দর্য।
মাহামুদা খাতুনের জন্ম যশোর সদরে। তার বাবা মীর ফয়েজ আহমেদ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। যশোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবনের পাট চুকিয়ে তিনি সরকারী মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতকার্য হন। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের অনার্স শেষ করে চাকরি জীবনে তার পদার্পন ঘটে। যশোরে অবস্থিত বাংলাদেশ কমার্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে তার চাকরি জীবনের সূচনা হয়। এরপর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে একজন ইন্সট্রাকটর হিসাবে যোগ দেন। সেখানে আড়াই বছর চাকরি করার পর ২৫ তম বি সি এসের মাধ্যমে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বেতারে যোগদান করেন। তার স্বামী তানভীর সারোয়ারও একজন বি সি এস কর্মকর্তা। তিনি আঞ্চলিক প্রকৌশলী হিসাবে বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত আছেন। লেখিকা মাহামুদা খাতুন তিন সন্তানের জননী। সন্তানদের ভালোভাবে পরিচর্চা এবং মূল্যবোধ তৈরির মাধ্যমে আদর্শ মুসলিম হিসাব গড়ে তোলার জন্য ২০১২ সালে তিনি বিসিএসের মত চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে আদর্শ গৃহিণী হয়ে যান। ২০১৩ সাল থেকে তিনি লেখালেখিতে মননিবেশ করেন। নিজের টাইমলাইনে বিভিন্ন ই্যসু নিয়ে লেখার মাধ্যমে লেখার জগতে তার অনুপ্রবেশ ঘটে। ১৯১৮ সাল পর্যন্ত নন-ফিকশনাল লেখিলেখিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ফিকশনাল বই লেখা শুরু করেন। ২০২১ সালে বই বের করতে চাইলেও নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন গ্রুপে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হয়েছেন। ' প্রিয়ভাষিণী' তার লেখা প্রথম উপন্যাস। ২০২৩ এর বইমেলায় বইটা প্রকাশ করার কথা থাকলেও বইয়ের কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে বইমেলায় বইটা বের করা হয়ে ওঠেনি। আগামী জুনে লেখকের প্রথম উপন্যাস ' প্রিয়ভাষিণী' আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।