লাইটিল নামক নতুন একটি গ্রহে অবতরণ করে অনুসন্ধানী স্পেসশিপ সিসকো। গ্রহটিতে আগে কখনো মানুষ আসেনি। এই প্রথম। কোনো প্রাণীও নেই গ্রহটিতে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে অভিযাত্রীরা তিনটি ডিম পায়। একটি থেকে জন্ম নেয় মানুষের মতো দেখতে এক পুরুষ প্রাণী। পুরুষ বাচ্চাটি জন্মের সাথে সাথে মধ্যেই কথা বলতে শুরু করে মানুষের সাথে। নিজের গোত্রের নাম জানায় লালিন, আর তার নাম বলে পাইমান। পাইমানের অবিশ্বাস্য একটা ক্ষমতা রয়েছে, অন্য প্রাণীর মস্তিষ্কপঠন করতে পারে। সবচেয়ে কমবয়সি নারী অভিযাত্রী নিতিনার মস্তিষ্কপঠন করে মানুষের জীবনচক্র, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সক্ষমতা সম্পর্কে জেনে যেতে থাকে পাইমান। নিতিনার কাছে নিজের অভিলাষও ব্যক্ত করে সে, তার মূল উদ্দেশ্য নিজের গোত্রের বংশবৃদ্ধি করা। কিন্তু অন্য দুটো ডিম থেকে জন্ম নেওয়া দুই মেয়ে লালিনকে যখন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, তখন উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে যায় পাইমান। নিজের বংশরক্ষার জন্য হঠাৎই সে অপহরণ করে নিতিনাকে। নিয়ে যায় পাহাড়ের নিচে নির্জন এক সুড়ঙ্গের মধ্যে। নিতিনা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও পারে না। উপলব্ধি করে পাইমানের হাতে বন্দি সে। পাইমানের সন্তান এখন যে তাকে জন্ম দিতেই হবে। কিন্তু মানুষ হয়ে কীভাবে সে অন্য প্রাণীর সন্তান জন্ম দেবে! ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে তার! এদিকে ক্যাপ্টেনসহ অন্য অভিযাত্রীরা পাইমানের হাত থেকে নিতিনাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা এত সহজ নয়! স্বাভাবিক লেসার গান পাইমানের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত কী নিতিনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল? আর কী ঘটেছিল লাইটিল গ্রহের বিস্ময়কর প্রাণী পাইমানের?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।