এই গদ্যগ্রন্থ আমার একান্ত আপন, যেনো আত্মাস্বজন। কারণ এতে প্রাধান্য পেয়েছে এমন কিছু মানুষের কথা—যাদের সারাক্ষণ মনে পড়ে। যেমন আমার আম্মার কথা, যিনি জ্যোতির্ময় এক আশ্চর্য মুখফুল। যে ফুলকে দেখলেই আমার হৃদয়ের খরতাপের দাবদাহের অবসান হয়—বসন্তের সুবাতাস বয়। আব্বার স্মৃতি, যার কবরের পাশে শুয়ে বলতে ইচ্ছে করে, আব্বা—আপনাকে একনজর দেখার জন্য এসেছি। নানাজির গল্প, যিনি আমার হৃদয়ে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার এক অনুভব। আমাদের পরিবারের জন্য রহমতের সালসাবীল—করুণার অনুপম। মুর্শিদের পাঠদান, যার কণ্ঠে ‘কালা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা—যেনো কোনো আদিম আশেকের প্রেমের তাসবি দানা। যা অনন্ত আশ্চর্য নিয়ে মাশুকের হৃদয়ে—হুড়মুড় করে ঢুকে সফেদ ভালোবাসার মুক্ত হয়ে। এক অপ্সরীর সৌন্দর্য, যার কোমল অঞ্জলির রূপের উজ্জ্বল রোদ্দুরের ঝিকিমিকিতে—দূর হয় প্রকৃতির অন্তিম নিশীর শিশিরের কুন্তল, অন্তলীন গুহার আঁধার। যাকে আমার করে পেলে—জান্নাতি হুরের লালচও সামলাতে পারবো নিশ্চিন্তে। এছাড়াও আছে একজন মানুষকে স্বপ্নে দেখার ব্যাকুল আকাঙক্ষার প্রকাশ, যিনি আমার মনো-চক্ষু শীতলকারী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানবকুলের সর্দার, আহসানি তাকবিমে মন্ডিত—রাহমাতুল্লিল আলামীন। এই গ্রন্থে লতাগুল্মের ক্রমাগত নৈঃশব্দে, মৃদ উচ্চারণ ও সহজ প্রকাশভঙিতে, শব্দের ম্যাজিকে—বৃষ্টি, প্রকৃতি, প্রেম, দুঃখবোধ, স্মৃতিকথা ও নিঃসঙ্গতা অঙ্কুরিত হয়েছে গদ্যের বুননে। যেমন লিখেছি, ‘বৃষ্টি এলেই আমার সুশীতল বারিধারায় ভিজতে ইচ্ছে করে। মনে হয়—মিকাইল ফেরেশতা পৃথিবীতে পাঠাচ্ছেন জান্নাতি ফ্লেভার’। ‘কিশোরী মেয়ের নাকফুলের সৌন্দর্য হয়ে, শীত আসে আমার গ্রামে। কুয়াশায় লীন হিমেলে কুমড়ো ফুল হাসে, দূর্বাঘাস শিশিরের নূপুর পায়ে চলে—যেনো কেবল আমার গ্রামে, ভাটিদিহিতে’। ‘ইয়াসমিন, তুমি পাশে থাকলে—আনন্দরেণুর উচ্ছ্বাসে চারিদিকে শিউলি ঝরে পড়ে, ভালোবাসার ফুলবনে’। ‘বাচ্চারা দুষ্টুমি করে হলেও পাখির বাসা ভেঙে দিলে কিংবা সদ্য প্রসূত ছানা নিয়ে এলে পাখি যেমন কষ্ট পায়—আম্মা তারচেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছেন আমার অসুস্থতায়’। ‘কেউ এসো, সঙ্গ দাও, কান্না থামাও, ভালোবেসে অবিরাম কথা বলে যাও। না হয় এই অমলিন নিঃসঙ্গতায়, মৃত্যু সুখে হেমন্তের ঝরাপাতার মতো আমিও ঝরে যাবো’। শিক্ষণীয় বিষয় ও জ্ঞানমূলক আলাপ বাদ দিয়ে তুমুল আবেগের করুণতা মেখে—সৃষ্টির বিচিত্র রূপের কারিশমা ও জীবন সংগীতের স্মৃতিময়তা দেখতে ‘জ্যোতির্ময় এক আশ্চর্য মুখফুল’ পাঠে আপনাকে স্বাগতম। ভালোবাসা রইলো।
আদিল মাহমুদ আপাদমস্তক একজন সৃষ্টিশীল লেখক। তার শব্দ নির্বাচন, প্রয়োগ কৌশল, অনবদ্য চিত্রকল্প, সৃষ্টি বৈচিত্র, নির্মাণশৈলী আনন্দদায়ক। সিলেটের কানাইঘাট থানার ভাটিদিহি গ্রামে ২০ জুন ১৯৯৮ সালে আদিলের জন্ম। পিতা: আনওয়ারুল আম্বিয়া মানিক, মাতা: জোছনা আহমেদ। ছেলেবেলা থেকে থাকেন ঢাকা শহরে। পড়ালেখা করেছেন জামিআ ইকরা বাংলাদেশে। শৈশব-কৈশোর থেকে টুকটাক লিখেন। এখন নিয়মিত। নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম কবিতার পাশাপাশি গল্প ও প্রবন্ধ লিখে চলছেন অবিরাম। অনুবাদ সাহিত্যেও আছে তাঁর বিরাট দখল। সামনে আদিল মাহমুদ আমাদের বাংলা সাহিত্যে আরও বড় বড় বিস্ময় নিয়ে হাজির হবেন।