বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সম্পাদিত যথাশব্দে নারী শব্দের অর্থ মানবী, মনুষ্যা, রমণী, নন্দিনী, মাগী, আওরাত, জেনানা, অবলা, ভাবিনী, অন্তঃপুরবাসিনী এবং অপরাজিতা। একটি শব্দের চেয়ে অন্যটি আলাদা। হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’র একটি অধ্যায়ের নাম ‘দেবী ও দানবী’। সেখানে তিনি বলছেন, নারী পুরুষের কাছে এক অনন্ত অস্বস্তির নাম। কখনো পাপীয়সী হাওয়া অথবা পবিত্র মেরীমাতা। পুরাণ বা সাহিত্যে কোথাও ‘মানুষ’ নারী খুঁজে পাওয়া ভার। নারী কখনো দেবী কখনো দানবী। ধর্মগ্রন্থগুলোয় নারীর উপস্থাপন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা আছে। ইহুদিপুরাণে বলা হয়েছে আদম (আ.)-এর জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রথমে লিলিথ নামের একজন সঙ্গী তৈরি করেছিলেন। দুর্বিনীত, স্বেচ্ছাচারী, স্বাধীনচেতা সেই নারী আদম (আ.)-এর আধিপত্য মানতে রাজি হননি। তিনি পাপিষ্ঠা এবং বহু কুসন্তানের জন্ম দেন। ধর্মগ্রন্থগুলোয় নারী ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। ইসলাম ধর্মে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত বলা হয়েছে। আবার পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র’। মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে, ‘নারী জাতি ক্ষেত্রস্বরূপ এবং পুরুষ বীজস্বরূপ। ক্ষেত্র ও বীজের সংযোগেই সমস্ত প্রাণীর উদ্ভব হয়ে থাকে’। ধর্মগ্রন্থেই নারী ত্রাতা-দার্শনিক-মুনি-ঋষি। ত্রাতা হিসেবে, পথপ্রদর্শক হিসেবে নারীদের উপস্থাপন রয়েছে অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোতেও। গান্ধারী মহাভারতের এমন এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। গান্ধারী, দুর্যোধনসহ শত পুত্রের মা। যখন যুধিষ্ঠির দুর্যোধনের সঙ্গে পাশা খেলায় হারতে হারতে শেষ পর্যন্ত দ্রৌপদীকে বাজি ধরেও হেরে যান, তখন দুর্যোধনের আদেশে দুঃশাসন সবার সামনে দ্রৌপদীর শাড়ি খুলতে থাকেন। দুর্যোধনের এই কুকর্মের জন্য গান্ধারী স্বামী ধৃতরাষ্ট্রকে ছেলেকে ত্যাগ করতে বলেছিলেন। এ মুহূর্তে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা নারী। শিক্ষা-মেধায় নারী পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে এগোচ্ছেন, কোথাও কোথাও পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন।