হায়দার সাহেব ইদানীং রাত দুইটার আগে বাসায় ফেরেন না। তার বয়স পঞ্চাশ ওভার হলেও চেহারা বলে টুয়েন্টি! চেহারা থেকে দিন দিন বয়সের ছাপ কমছে! অনেকটা ক্রিকেট ম্যাচের মতো। পঞ্চাশ ওভার, তারপর টুয়েন্টি। যে হাবভাব তাতে হায়দার সাহেব সমনের দিনে সিক্স এ সাইড ম্যাচের মতো ছয় বছরের শিশু হয়ে যাবেন কি না যথেষ্ট সন্দেহ আছে। উল্টো দিকে রাবেয়া বেগম হায়দার সাহেবের স্ত্রীর বয়স চল্লিশ হলেও চেহারা ইট ভাঙা খোয়ার মতো ভেঙেচুরে যাচ্ছে। দেখলে মনে হয় পঞ্চাশ ওভার। চেহারা ভেঙে গেলেও মেজাজ দেমাগ এখনো ঠিক আছে। পান থেকে চুন খসলে তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। মেজাজের সবটুকু ঢেলে দেন হায়দার সাহেবের ওপর। হায়দার সাহেব তো প্লাস্টিক না যে মেজাজের গরমে গলে যাবেন। ডিমও না যে ভাজি হবেন। তিনি নিতান্ত শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক। মফস্বল শহরে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত। গভীর রাতে বাড়ি ফেরা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। ছেলেমেয়ে দুটো লেখাপড়ার সুবাদে বাইরে থাকায় মায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারছে না। রাবেয়া বেগমের একটাই প্রশ্ন, বয়স হয়েছে এত রাত পর্যন্ত বাইরে কী? ―ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যবসা করি। ―রাতের বেলা কীসের ব্যবসা? রাবেয়া বেগমের কথার ঝাঁজ যত বাড়ে হায়দার সাহেবের মুখে ততোধিক প্রশান্তির হাসি ফোটে। যেন চিৎকার দিতে দিতে মহিলার গলা ফেটে মরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। মুখে হাসি নিয়ে বলেন, ছোট শহরের বড় ব্যবসায়ীরা সারা দিন ব্যবসা করে রাতের বেলা ক্লাবে বৈঠকে বসে, কীভাবে আরো উন্নতি করা যায়।
মোহাম্মদ অয়েজুল হক। নড়াইল জেলার কালিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত টোনা গ্রামে তার নানাবাড়িতে ১৯৮৫ সালের ২৭ নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। দাদাবাড়ি বা গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্ভুক্ত ফলসী গ্রাম। বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা থেকে এসএসসি ও সরকারি সুন্দরবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে হার্ডওয়্যার ও ট্রাবল শুটিংয়ে ডিপ্লোমা করে ঢুকে পড়েন চাকরিজীবনে। ছোটবেলা থেকেই অগোছাল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। লেখালেখিও সেই ছোটবেলা থেকে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় তৎকালীন জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন যায়যায়দিন-এ। একই সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিকী-সাপ্তাহিক চলতিপত্রে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, ছড়া। সাপ্তাহিক চলতিপত্রের কলামিস্ট হিসেবে মাথাগোল হকের কলাম শিরোনামে নিয়মিত কলামও লিখেছেন। বাংলাদেশের প্রথম রম্য ম্যাগাজিন দৈনিক ইনকিলাবের উপহারে লিখেছেন অসংখ্য রম্য গল্প ও ফিচার। দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছেন রম্য গল্প। প্রথম উপন্যাস ‘পথে পথে’ মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে ২০১১ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ অয়েজুল হকের অন্যান্য বই : বইঘর থেকে প্রকাশিত উপন্যাস ছায়াসিমি-২০১৬, চাঁদের আলো দিনরাত-২০১৫। একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় সম্পাদিত গল্প সংকলন ‘আকাশের স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে দেব’ ও যৌথ কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নস্নান’। জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় লিখে চলেছেন ছোটগল্প, শিশুতোষ গল্প। একজন ব্লগার হিসেবে প্রথম আলো ব্লগ, সামহোয়ারইন ব্লগ, শব্দনীড়ে একসময় লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা। ২০১৮ সালে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রম্য গল্প নিয়ে সাহিত্যদেশ ২০১৯-এর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করেছিল, ‘গল্পের সাথে হেসেছিল গল্পগুলো’। একই প্রকাশনী থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় মোহাম্মদ অয়েজুল হকের উপন্যাস,আজ আকাশে চাঁদ নেই।