যাপিত জীবনই কবিতার জন্মদাতা। ঘটনাপ্রবাহ যখন কবিমনকে আন্দোলিত করে, তখনই জন্ম নেয় এক একটি কবিতা- যা হতে পারে আবেগকেন্দ্রিক, অনুভূতির মায়াজাল, ভালোবাসার চিত্র, সমকালের প্রবাহবার্তা, প্রতিবাদ, দর্শন ইত্যাদি বিষয়বস্তুর রূপকল্প। কবিতা মানুষের মনকে ভাবায়, জাগায়, আনন্দ দেয়, সচেতনতা বৃদ্ধি করে, ন্যায়ের হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস যোগায়, সত্যের পথ সার্বিকভাবে মানুষের কল্যাণ করে। কাব্য সৃষ্টিশীলতা ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনার জন্য কবি পারভীন শাহনাজ অন্য সকলের থেকে আলাদা। কবিতা শব্দের মধ্যে নয়, শব্দের অন্তরালে - নীরবতার মধ্যে খুঁজতে হয়। পারভীন শাহনাজের কবিতা পাঠ করলে কবিতার এই সহজাত বৈশিষ্ট্যকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করা যায়। কবির প্রাত্যহিক চিন্তা-ভাবনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেম সবকিছু এই গ্রন্থের কবিতাগুলোতে মূর্ত হয়ে উঠেছে। উপরন্তু নিবিড় পাঠে পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান, জাতীয় সংহতি, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ও উঠে আসে কবিতাগুলোয়। একজন ব্যক্তি কবি হয়ে ওঠেন তখনই, যখন সৎ ও আন্তরিক প্রয়াসে নিজস্ব মেধা ও মননের সঙ্গে দূর প্রসারিত কল্পনায় নিজেকে ঋদ্ধ করে নিতে পারেন। এবং এই মেধা ও মননের তেজপুঞ্জ থেকে গঠিত কাব্য-শরীর পাঠকের সামনে উন্মুক্ত করে দিতে পারেন। পারভীন শাহনাজের কবিতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য— কবিতাকে অনাবশ্যক জটিল এবং দুর্বোধ্যতার খোলসে আবদ্ধ করে কবিতার কাছে একজন পাঠকের প্রথম এবং একান্ত চাওয়া কাব্যময়তাকে তিনি কখনও ক্ষুণ্ণ করেননি। কবির কাব্যভঙ্গি নদীর স্রোতধারার মতো অত্যন্ত সাবলীল- যা পাঠকমনকে ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ করবে। কমলকলি চৌধুরী কবি, কথাসাহিত্যিক, অধ্যাপক।