আমি লেখক নই, ইতিহাসবিদও নই। রাজশাহী বিশ্ববিদালয় থেকে ১৯৭৫ সালে ২য় শ্রেণিতে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৯ সালে ২য় শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করি।। এরপর জীবিকার তাগিদে প্রথমে বগুড়া জেলাধীন দুপচাচিয়া উপজেলার নব প্রতিচিত হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে এক বছর, ফারার নামে এক ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে বাংলাদেশে ছয় মাস, সাইপ্রাসের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির অধীনে এক বছর, এর মাঝে সাইপ্রাসের সলস্তিনি শিপিং কোম্পানিতে স্টোর কিপার হিসাবে কিছুদিন, অতঃপর দেশে ব্যবসা নয় বছর। শেষে দুপচাচিয়া মহিলা (বিশ্ববিদ্যালয়) কলেজে অধ্যক্ষ পদে একুশ বছর কর্মরত ছিলাম। ছাত্রজীবনের শেষের দিকে 'পরিণতি' এবং 'ব' নামে দুটি নাটকের বই লিখেছিলাম। নাটক দুটি মঞ্চস্থ করার অনুমতির জন্য বগুড়া জেলা সদর বোর্ডে জমা নিয়েছিলাম। জেলা সদর বোর্ড বই দুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৯৭৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে অনুমতি দিয়েছিল। সেন্সর বোর্ডের সদস্য সচিব বগুড়া জেলা স্কুলের শিক্ষক জামিলুর রহমান স্যার (লেখক ও কলামিস্ট) আমার প্রশংসা করেছিলেন। হতে পারে একজন তরুণ লেখককে উৎসাহ দেবার জন্য। তিনি আমাকে বলেছিলেন, “তুমি চমৎকার লিখেছ, তুমি লিখবে, ভবিষ্যতে তুমি অনেক ভালো করবে। কথা দিয়েছিলাম স্যারকে, হ্যাঁ আমি লিখব। কিন্তু পারিনি। মুক্তি সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শত শত গ্রন্থের মধ্যে আমার প্রয়াস কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে জানি না। কারণ ইতিহাস লেখা বড় কঠিন কাজ। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস বলেছিলেন, ইতিহাস হচ্ছে, রেকর্ড অব দ্যা পাস্ট। এখানে নেই কল্পনার স্বাধীনতা, নেই দার্শনিকের মতো বিশ্বজনীন তত্ত্ব নির্মাণের অধিকার। সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি বস্তুনিষ্ঠ লেখা উপহার দেবার জন্য। বইটিতে সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ পরিবেশে আমার বড় হওয়া, আমার পড়ালেখা, রাজনীতি এবং জারির আন্দোলনে সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা এসব অতি সংক্ষেপে আলোকপাত করেছি। এজন্যই যে এরা জানতে পারবে মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা লিখনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা অধিকাংশই ছিলেন গ্রামগঞ্জের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও জাতিকে ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে বছরের পর বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।
Title
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান