‘কিও মাহিন বাড়ি আইলা কবে? আর বাড়ির চর্তুদিক দিয়া এমন কইরা পর্দা লাগাইতাছো ক্যান? নোয়া কোনো পীরের মুরিদ হইছো নাকি?’ চটের কোণাটা বাঁশে আটকে চিকন তারের প্যাঁচ খুলতে খুলতে মাহিনের উচ্ছ্বাসিত জবাব, ‘কি যে বলেন সাঈদ ভাই! এরকম কিছুই না। সামনের মঙ্গলবারে বড় ভাইয়ের বিয়ে। হবু ভাবি নাকি খুব সুন্দরী। এতদিন তো রাস্তার পাশের টিউবওয়েল, রান্নাঘর কোনো অসুবিধাই হয়নি আমাদের।’ ‘বিয়া অইলে অইবো তা অহন অসুবিধাডা কোনহানো কও তো?’ ‘আসলে বড় ভাই তো এই বউ দেখে আসার পরে থেকেই বলছে তাড়াতাড়ি বাড়ির চারদিকে পর্দা লাগাতে হবে, নাহলে নাকি এই বউকে একবার দেখলে বাড়িতে ছেলে মানুষদের ভীড় লেগে থাকবে। হাহাহাহাহাহা!’ ‘কিতা কও মিয়া? মাইয়া অতোই সুন্দরনি?’ ‘কি জানি ভাই। আমরা তো কেউ দেখি নাই। হয়তো সুন্দরই হবে। কিন্তু ওই সুন্দর ফুন্দরের দোষ না ভাই। বাড়ির বউকে লোকচক্ষু থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা আরকি!’ ‘অওও! যাক। বিয়া অইলে পরে আইয়া দেহুম নে বউরে। যাইগা, ক্ষেতে পানির মেশিন লাগাইছি, যাইয়া দেহি কদ্দুর অইলো।’ মিটমিট হেসে মাহিনের কাজের প্রগাঢ়তা আবার শুরু হলো। বাড়িতে বেড়া লাগানোর কাজটাই শুধু মাহিনের ঘাড়ে পড়েনি, বড় ভাইয়ের পরে সেই একমাত্র উপযুক্ত ছেলে হওয়ায় সব ধকলই তাকে সামলাতে হচ্ছে। বাড়ির কোনদিকের দরজা জানালা ক্ষতিগ্রস্ত এগুলোও দেখে দেখে মিস্ত্রি এনে ঠিক করাতে হচ্ছে। এসব নাড়াচাড়া দেখে লোকে এসে তাদেরকে প্রশ্ন করছে, ‘বিরাট খান্দানী ঘরের মাইয়া আনতাছো নাকি?’ তখন তাদের কিছু বলার না থাকলেও ছোট করে জবাব আসে, ‘ঘর কেমন জানি না, কিন্তু মাইয়াডা বড় খান্দানী।’ এমন কথায় কেউ কেউ নাক ছিঁটকায় আবার কেউ কেউ মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘হ মাইয়া ভালা অইলে আর কিতা লাগে! সংসার তহ মাইয়ার গুণেই সাজ লয়।’ মানুষের এমন এমন কথা শুনে রাবেয়া সুলতানা হাসেন। তারও এই সময়টা নিয়ে বহু বছরের স্বপ্ন। চতুর্থ ছেলের জন্মের পরেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, আল্লাহ তার কপালে হয়তো মেয়ে রাখেনি। তাই ভেতরে গভীর ইচ্ছে পুষে এসেছেন চারটা ছেলে দিয়ে চারটা মেয়ে আনবেন, তারপর তিনি ভুলে যাবেন মেয়ের অভাব কি! এইতো আর কয়েকদিন বাদেই এই ঘরে টুকটুকে পায়ে একটা মেয়ে হেঁটে বেড়াবে, তাকে মা মা বলে ডাকবে, এটা ভাবতে গিয়েই রাবেয়া খুশিতে আধখানা হয়ে যান। তার উপর তার ঘরে একটা জলজ্যান্ত পরী আসছে, ভাবলেই কেমন রোমাঞ্চকর ভালো লাগা কাজ করে!