বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক বই এরই মধ্যে লেখা হয়ে গেছে। আমি বেশ কিছু বই পড়েছি, দেখেছি, বিশ্লেষণ করেছি। আমার মনে হয়েছে, যে বয়সে আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এটা স্বচ্ছ ধারণা অর্জনের কথা অর্থাৎ নবম দশম শ্রেণি থেকে একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি এই বয়সের ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে লেখা কোনো বই আমার চোখে পড়েনি। তাহলে প্রশ্ন হলো কেমন হবে সেই বই? হবে এমন, যে বই পড়ে তাদের মনে জাতি, জাতীয়তা এবং বঙ্গবন্ধু কেন আমাদের জাতির পিতা সেই সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্বগত ও ইতিহাসভিত্তিক একটি পরিষ্কার ধারণা জন্ম নেবে। পৃথিবীর প্রত্যেক স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের একজন ‘জাতির জনক’ আছে, যাঁরা তাঁদের স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন। আমাদেরও তাই। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এই নিয়ে একটি অহেতুক বিতর্ক তৈরি করে। বিতর্কটি এমন যে এর সাথে সুকৌশলে ধর্মের একটি অপসংযোগ ঘটানো হয়। যার কারণে আমাদের দেশের অনেক তথাকথিত শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, কিশোর, তরুণ এবং সাধারণ মানুষও এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্র, ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা, নাগরিকতা প্রত্যেকটি বিষয়ের সংজ্ঞাই বিশ্বব্যাপী সর্বজন স্বীকৃতভাবে নির্ধারিত হয়েছে বহু শতাব্দী আগে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ বইতে আমাদের কিশোর বয়সের স্কুল ও কলেজ ছাত্রছাত্রীদের এবং সাধারণ পাঠকদের জন্য আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারণা অনুযায়ী ‘জাতি’ এবং ‘জাতির জনক’ প্রত্যয় দুটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কর্মময় ও সংগ্রামী জীবন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর আজীবনের সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের উপযোগী করে। আশা করি এ গ্রন্থ পাঠের পর আমাদের তরুণ প্রজন্মের এ বিষয়ে কখনো বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ থাকবে না।