বাজার থেকে গুলি ছোড়ার আওয়াজ শোনে রিপা। রমজান মাসের শেষ দিনে রাজ্যের লোক জড়ো হয়েছে অলকী নদীর পাড়ে। সন্ধের মিটমিটে আলো আলো আলো উবু হয়ে শুয়ে আছে নদীর জলে। পনেরো-বিশটা ডিঙি নৌকা ভরতি লোক নদীর মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে হই-হুল্লোড় করছে চাঁদ দেখার আনন্দে। নদীর জল ঠেলে বের হয়ে আসছে গোলাকার রুপোলি আয়নার মতো দেখতে চাঁদটা। কাল ইদ। ̄নেশ্বর গ্রামের অধিবাসীদের ইদের চাঁদ এহেন আয়োজন এমনই উৎসবের রেশ ছড়ায় চারপাশে। ইদের আগেই এ এক আরেক ইদের খুশি। গ্রামের চেয়ারম্যান -মেম্বার থেকে শুরু করে ছেলে -বুড়ো প্রায় সবাই চাঁদ দেখার আয়োজনে জড়ো হয়। চাঁদ দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে ̄নেশ্বর গ্রামের একমাত্র বাজার জনতার হাট থেকে পরপর আকাশ তাক করে তিনবার ̧লি ছোড়া হয়। অন্ধ মানুষও যেন ইদের চাঁদ ওঠার এই আনন্দ টের পায় তাই! আওয়াজ করা হয় ̧গুলি ছুড়ে। একটা গন্ধগোকুলও এই আওয়াজ এড়াতে পারে না। শব্দ শুনে ভয়ে আগাছা ও পাতার আড়ালে মোচড় দিয়ে হাঁচড়-পাঁচড় করে মাটির রাস্তা পার হতে যায় বোকার মতো অযথাই। এই সময়টায় দুই । -একটা মুরগির বাচ্চা পথ হারিয়ে এদিক-ওদিক ছোটে। তক্কে তক্কে থেকে বাড়ির একমাত্র গন্ধগোকুলটা মুরগির খোঁজ করে। সে মূলত পথের ওপর পড়ে থাকা ফল-টলই খায়। কিন্তু মাঝে মাঝে ভালোমন্দ খেতে ইচ্ছে করে। তখন শামুক, ডিম, পাখি, খেজুর, তালের রস এবং মুরগির বাচ্চার নরম মাংসের জন ̈ মন পোড়ে। আজও ভালো কিছু খাবে বলে ছোটা হচ্ছিল। এই যন্ত্রণার গুলির আওয়াজ সব বাড়ছে করে দিলো। রাস্তা পার হবার সময় গন্ধগোকুলটার ওপর চোখ যায় রিপার। বোকা প্রাণীটা বাড়ির পেছন দিককার পানির ট্যাংকির দিকে গিয়ে না ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে। চোখ-কান খোলা রাখতে হচ্ছে তাকে কয়েকটা দিন। গন্ধগোকুলটা মাংসের খোঁজ করছে। মাংস ওদিকে আছে তবে মুরগির বাচ্চার মাংস নয় মানুষের বাচ্চার মাংস!
কিঙ্কর আহ্সান এর জন্ম ১৯৮৯ সালের ৬ জুলাই কুষ্টিয়া জেলায়। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগে। সেখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে সক্রিয় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সংঘ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, কন্ঠশীলন, মুক্তআসর, বিল্ড বেটার বাংলাদেশসহ আরও অনেকগুলো সংগঠনের সাথে। লেখালেখির শুরু তার দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কন্ঠ, বাংলানিউজ, পরিবর্তনসহ দেশের প্রায় সব শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করেছেন। ছোটগল্প লেখার পাশাপাশি কালের কন্ঠের 'বাতিঘর' পাতায় শিক্ষানবিস সাব এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। সহকারী স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন 'কে হতে চায় কোটিপতি' টিভি শো'তে। পাশাপাশি 'মার্কস অলরাউন্ডার', 'হাসতে মানা', 'হ্যান্ডসাম দি আলটিমেট ম্যান পাওয়ার্ড বাই বাংলাদেশ নেভী' ও 'বাংলাদেশ সুপার লীগ-গ্রান্ড লোগো আনভেইলিং' এর প্রধান স্ক্রিপ্ট রাইটার ছিলেন। এই স্বল্প সময়ের সৃজনশীল ক্যারিয়ারেও বেশ সাড়া ফেলেছে কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমগ্র। লেখালেখির পাশাপাশি ফিল্মের কাজেও জড়িয়েছেন এই লেখক। 'পাতার নৌকা', 'ক্রিং ক্রিং' ও 'জলপরানি' টেলিফিল্মের কাজ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনেকের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাথে ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজ করেছেন। কাজ করেছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন সংস্থায়। সবকিছুর পরও যেন লেখালেখিই কিঙ্কর আহ্সান এর আসল জায়গা। বইমেলায় প্রকাশিত 'আঙ্গারধানি', 'কাঠের শরীর', 'রঙিলা কিতাব', 'স্বর্ণভূমি', 'মকবরা', 'আলাদিন জিন্দাবাদ' ইত্যাদি কিঙ্কর আহ্সান এর বই সমূহ, যা বেশ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে।