বেদ শব্দটির অর্থ জ্ঞান। জ্ঞানার্থক বিদ্ ধাতু থেকে বেদ শব্দের ব্যুৎপত্তি। সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদ গ্রন্থ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রাবীণ্যের প্রতীকস্বরূপ। ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর সাহিত্যসম্ভারের মধ্যে প্রাচীনতম নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত এই বৈদিক গ্রন্থরাজি। সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও বৈদিকগ্রন্থের ভাষা এতটাই প্রাচীন ও স্বতন্ত্র যে ভাষাতাত্ত্বিকগণ এই ভাষাকে সংস্কৃত বা বৈদিক সংস্কৃত না বলে শুধুমাত্র বৈদিক ভাষা হিসাবে অভিহিত করেন। বেদ মূলত ধর্মীয় গ্রন্থ। প্রত্যক্ষ ও অনুমানের দ্বারা যে জ্ঞানলাভ হয় না সেই অতীন্দ্রিয় জ্ঞান বেদের দ্বারা লাভ করা যায়—‘প্রত্যক্ষেণানুমিত্যা বা যস্তূপাযো ন বোধ্যতে এবং বিদন্তি বেদেন তস্মাদ্ বেদস্য বেদতা। বেদ চারটি—ঋক্, সাম, যজুঃ ও অর্থব। বৈদিক যাগযজ্ঞের সঙ্গে মূলত প্রথম তিনটি বেদ সংশ্লিষ্ট। যে মন্ত্রগুলি পদ্যাত্মক তাদের বলা হয় ঋক্। ঋগবেদে এই মন্ত্রগুলি সংকলিত আছে, যদিও যজ্ঞের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত নয় এমন কিছু ছন্দোবদ্ধ মন্ত্রও এখানে পাওয়া যায়। বৈদিক যাগযজ্ঞ যে মন্ত্রগুলি গান করা হত সেই মন্ত্রগুলি সামবেদে সংকলিত আছে। ‘সাম' কথাটির অর্থ সুর। সামবেদে মাত্র কয়েকটি মন্ত্র ছাড়া সব মন্ত্রই ঋগ্বেদের থেকে সংকলিত। যজুর্বেদটি দুটি ভাগ—মন্ত্রাত্মক শুক্লযজুর্বেদ ও যজ্ঞের বিবরণ ও মন্ত্রের সংমিশ্রণে কৃষ্ণযজুর্বেদ। অর্থবেদের সম্পূর্ণ নাম অথর্বাঙ্গিরস। অথর্ব ও অঙ্গিরস শব্দের দ্বারা প্রাগৈতিহাসিক অগ্নি-পূজারীদের বুঝায়। পরবর্তীযুগে এর অর্থ দাঁড়ায় অথর্ব ও অঙ্গিরসের দ্বারা উচ্চারিত যাদুমন্ত্র। অথর্ব অংশের মন্ত্র রোগ উপশম ইত্যাদি কারণে ব্যবহৃত হত অর্থাৎ কল্যাণময় দিকটিই এর প্রধান, অঙ্গিরসের মন্ত্রগুলি কালো যাদু (Black Magic) অর্থাৎ মারণ, উচাটন ইত্যাদি অকল্যাণকর কার্যে প্রযুক্ত হত।