বাঙালি মুসলমান সমাজ যখন সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ ছিল; আর সে সময়ের নারীসমাজের শিক্ষার আলো নিয়ে এসেছিলেন নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। অতুল ঐশ্বর্যের মধ্যে জন্ম রোকেয়ার। মস্ত প্রাসাদে বাস। বাগানের গাছগাছালি থেকে সারাদিন ধরে কত কত পাখির ডাক। বাগানের মধ্যে আবার মস্ত এক পুকুর। পরিচর্যার জন্য রয়েছে কত পরিচারিকার দল। রোকেয়াকে সবাই আদর করে ডাকত রুকু বলে। কিন্তু এত ঐশ্বর্য আর স্নেহ- ভালোবাসার মাঝেও রোকেয়া বড়ো হয়ে উঠেছেন পর্দাপ্রথার কঠিন নিয়ম মেনেই। অবাক হয়ে তিনি দেখেছেন, এদেশের মেয়েরা কত সহজভাবে মেনে নেয় এই অবরোধ। একে তো এই পর্দাপ্রথার দাপট, তার থেকেও কষ্টের লেখাপড়া শেখার উপর নিষেধাজ্ঞা। রোকেয়ার পরিবারে মেয়েদের আরবি শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল ঠিকই, কিন্তু বাংলা বা ইংরেজি পড়তে চাইলেই বিপদ! পরিবারের নিষেধ অমান্য করে গোপনে রোকেয়াকে বাংলা শিখিয়েছিলেন বোন করিমুন্নেসা। তিনি নিজেও লুকিয়ে মাটিতে দাগ কেটে কেটে বর্ণমালা শিখেছিলেন। আর রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষাদান করেছিলেন বড়োভাই ইব্রাহীম সাবের। তাঁর পিতা জহীরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হোমায়রা। আর তিন ভাই। যাঁদের একজন শৈশবে মারা যান। দুই ভাই হলেন আবুল আসাদ ইব্রাহীম সাবের এবং খলিলুর রহমান আবু জাইগাম সাবের। রোকেয়ার পূর্বপুরুষেরা মোগল আমলে উচ্চ সামরিক এবং বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োজিত ছিলেন। বিয়ের পরে তাঁর নাম হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তবে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।