কবি ও কাব্যরসিকগণের একটু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। সুন্দরের সুমধুর স্মৃতি ও স্বপ্ন তাদের আত্মাকে জাগিয়ে রাখে। আর সেই আত্মা যেন জীবন ও বাস্তবতার কঠিন আঘাতে আহত পাখি (কিছু মুখ)। এ জন্য এই সংকলনের কবিতাগুলোকে জেগে থাকা আহত ও পরিচিত বিহঙ্গেরই গান বলে মনে হয়েছে। এই পাখি ‘শূন্যতার খাবলের ক্ষত মুড়িয়ে রাখে’, ঢেকে রাখে, আর প্রত্যক্ষ করে : সময়ের সিন্দুকে থেকে ভালোলাগা মুহূর্তগুলো একটু একটু করে হাতছাড়া হয়ে যায় (অপেক্ষার রথ) অনেক অনুশোচনা আছে এই পাখির। বড়ই কাব্যময় সেই অনুশোচনা : ‘আমাদের আয়নারা যদি প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে প্রতিভোরে আলোর আগায় সেঁটে দিতে পারতো, আধার ধোয়া আত্মা নবজাতকের চোখের মতো জ্বলে উঠতো;’ (আয়না) কবিতার বিচিত্র চিত্রকল্পে এই গান ছবি হয়ে ফুটে উঠেছে। যেন বিক্ষিপ্ত বাতাসে ওড়া মেঘচিত্রমালা। তবু ওরা এলোমেলো চিত্রময় মেঘের ভেলা নয়। ওসব ছবির কিছু ইতিবাচকতা তো আছেই। আছে আশ্চর্য বাতিতে বিশ্বাস, যেন হৃদয়ের মেধায় বিশ্বাস : ‘কবরে এক আশ্চর্য বাতি জ্বলে যে বাতির আলোয় সে মুড়িয়ে রাখে এক নিঃসঙ্গ রাতের ঘন অন্ধকার লেপটে থাকা আত্মার পলায়নপর বিভা...’ (আশ্চর্য বাতি) এইভাবে— ‘বুকের ভেতর কবর খুঁড়ে মানুষ দাফন করে রাখে মৃত্যুর লাশ’ (আশ্চর্য বাতি) আপনি বলবেন, ‘আরে ভাই, এতো সেই প্রেমের সাধনা দিয়ে মৃত্যু জয়ের পুরনো কথা।’ আমি বলি এ হলো কবিদের চিরায়ত আখ্যান। কবিদের দোষ দিয়ে লাভ কী? অমরত্বের আগুন জ্বালতে চান? প্রেম, সত্য, সুন্দরের সাধনা ভিন্ন আছে কোনও পথ? অন্য পথ নেই। তাই, প্রেম—সত্য—সুন্দরের মেঘচিত্রমালা এঁকে চলেছেন কবি হাশিম কিয়াম। জানি বা না জানি, আমরা তাঁর সহযাত্রী। অধ্যাপক স্বপন কুমার রায় সাবেক বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ এবং সাবেক অধ্যক্ষ মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজ।
হাশিম কিয়ামের জন্ম ২০ এপ্রিল ১৯৭৪ সালে, চুয়াডাঙ্গাল জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি গ্রামে। তার বাবার নাম মোঃ কিয়ামদ্দিন মণ্ডল, মায়ের নাম মোছাঃ রোমেছা বেগম। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছেন।