ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে যাঁরা প্রাণ বিসর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১) অন্যতম। ভারতে ব্রিটিশদের ক্ষমতা গ্রহণের পর এ দেশের কৃষকেরা সমস্যায় পতিত হয়। এতে কৃষকদের জীবন অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন হয়। ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের পাশাপাশি তৎকালীন জমিদাররাও দরিদ্র কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করে। এই অত্যাচারে কৃষকদের জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। এই পরিস্থিতিতে তিতুমীর খুবই মর্মাহত হন। তিনি তৎকালীন কোম্পানি শাসনের প্রতিও অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ কোম্পানি শাসকরা তৎকালীন কৃষকদের উপর নানারকম বেআইনি চাপ প্রয়োগ করে। এর ফলে বাংলার সর্বত্র অশান্তি ও প্রতিক‚লতা বিরাজ করে। এ প্রেক্ষিতে তিতুমীর একটি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব প্রতিক‚লতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি ২৪ পরগনা ও নদীয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর আন্দোলন কর্মসূচীর প্রচার ও প্রসার করেন। তাঁর এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়। তারপর তা কৃষক শ্রেণির আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে পরিণত হয়। তিতুমীরের বিদ্রোহ বাংলার কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে। ব্রিটিশেেদর বিরুদ্ধে তিতুমীরের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে লিখিত ইতিহাসে ভিন্ন ভিন্ন মত লক্ষণীয়। এই বইয়ের পাঁচটি অধ্যায়ে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের প্রেক্ষাপটে তিতুমীরের সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে তিতুমীরের জন্ম ও প্রাথমিক জীবন, দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিতুমীরের মক্কা জীবন, তৃতীয় অধ্যায়ে তিতুমীরের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, চতুর্থ অধ্যায়ে তিতুমীরের মতাদর্শ, পঞ্চম অধ্যায়ে তিতুমীরের বিদ্রোহ এবং পরিশেষে উপসংহার তুলে ধরা হয়েছে।