বর্তমান যান্ত্রিক জীবনে মানুষের সবচেয়ে দূলর্ভ বস্তুতে পরিনত হয়েছে ‘সময়’। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ও কর্মজীবনের পাশাপাশি মানুষের আরেকটি জীবন হলো নিজের, একান্ত নিজের জন্য যাপিত জীবনেরই কিছু আলাদা সময়। যে সময়ে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, বন্ধু-বান্দব, বসবাসহ কর্মী কারও প্রবেশাধিকার নেই। এ যেন একান্তই নিজের সাথে নিজের অদূশ্য দেয়ালের ওপাশে যাপিত কিছুক্ষু, সময় বা দিন। যে ক্ষু, সময় বা দিনে মানুষ নিজের মতো করে চিন্তা করে, ধ্যান করে, কল্পনার ফানুস উড়ায় নিজের রঙিন আকাশে। অথবা হতাশার বেড়াজালে আবিষ্ট হয় অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে বা বর্তমান যাপিত জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে, কিংবা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার পদধ্বনীর পদভারে দলিত মথিত হতে। এই যে নিজের মধ্যে বাস করা নিজেরই প্রতিচ্ছবি যখন নিজের মতো করে একটু সময় পায় তখনি মানুষ হাতে তুলে নেয় প্রিয় কোন বই তা হোক কোন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনীতি, সমাজনীতি, জীবনদর্শন, ধর্ম, দার্শনিক তত্ত বা বৈজ্ঞানিক তথ্যের বই, ঠিক যেমনটি আপনি তুলে নিয়েছেন এই ‘লোভ’ নামক ছোট গল্পের বইটি। এই বইয়ের গল্প গুলো কোনা আজ থেকে চব্বিশ বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ৩৪৪ নাম্বার রুমে বসে লেখা, আবার কোনটি গতকালের। যে ম্যাঁডোর বলপেনের কালির কিয়দংশ ছোট্ট ফোটার মতো লেগে আছে আমার তর্জনীর অগ্রভাগে, নাকে লাগছে তা থেকে নিঃসৃত কালির মিষ্টি গন্ধটাও যেমনটি লাগে ভাতের মার গালার পর ভাপ উঠা ক্ষুধা জাগানিয়া গন্ধটা অথবা নতুন মাটিতে প্রথম বৃষ্টি পড়ার পর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ, বাধান সিদ্ধ করার পর যে গন্ধটা নাকে ধ্বাক্কা দেয় আমাদের গ্রামীন জীবনে। গল্প গুলোতে বিভিন্ন সময়কে ধরার চেষ্টা করেছি যেমন ‘লোভ’ গল্পটি আজ হতে প্রায় দেড়শ বছর আগের টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের জমিদার যদুনাথ চৌধুরীর সাথে এক অন্ধ ভিক্ষুকের গল্প। আবার ‘বাশারের ভুল’ গল্পটি ঢাকা শহড়ের নি¤œ মধ্যবিত্ত জীবনে পোড় খাওয়া মানুষগুলোর আজকালকার গল্প। নীতিবোধের গল্প গুলোও আমার চেনাজানা জগত থেকে নেয়া এবং গল্পগুলোর বাস্তব ভিত্তিও খুবই যুক্তি যুক্ত ও হ্নদয় গ্রাহী। এই গল্পগুলো ছোটবেলায় আমার মায়ের কাছে, বাবার কাছে বা প্রতিবেশী চাচা-মামাদের কাছ থেকে সত্য ও নিরেপেক্ষ জবানিতে শোনা যা তাদের জীবনে প্রত্যক্ষ করা, বা আমার মতোই পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া। পরিমলের মাছ, বিলাপ, রায়, ময়দুল ও একটি সাপ, মানুষের বিবেকবোধ জাগানিয়া গল্প। হিন্দু মিথলজির উপর ভিত্তি করে লেখা ‘প্রতিমা’ এবং ভালোবাসার টানাপোড়নে ক্ষয়ে যাওয়া বিষাদময় জীবনের এক গল্প ‘সরীসৃপ’। এ বইয়ের গল্পগুলো আপনার চিন্তাশীল মনকে নাড়া দেবে, ভাবনার জগতকে আলোড়িত করবে। আপনার পরিবার-পরিজন বা ভালোবাসার মানুষগুলোকে একবারের জন্য হলেও কোননা কোন গল্প বলে আপনি আনন্দ পাবেন যেমনটি পায় সদ্য সন্তান জন্ম দেয়া কোন বাবা-মা। কিছু গল্প পাঠক পড়ার সময়ই তার রস আস্বাদন করে, কিছু গল্প মানুষ নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নেয়, কিছু গল্প মানুষ উপদেশ হিসেবে অংশীজনদের বলে কোন উপলক্ষ্যে। এই বইয়ের গল্পগুলো এমনই।
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক ড. মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, ড. জে. আলী নামে পাঠক মহলে সমধিক পরিচিত। হুমায়ুন পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে যে কয়জন লেখক পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছেন ড. জে. আলী তাদের মধ্যে অন্যতম। তার লেখায় টান আছে, আছে পাঠককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার চমৎকার কৌশল। পুরুষ্কার প্রাপ্ত এই লেখককে আত্ব-উন্নয়নমূলক বই লেখার জন্যে বলা হয়-বাংলাদেশের ডেল কার্নেগী। টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব পাশে পয়লা গ্রামে ১৯৭৯ সালে জন্ম নেয়া এই লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পূর্ণ করেন। এরপর ঢাকায় এসে ইংরেজী সাহিত্যে এম.এ এবং এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন ভেতরের তাগিদ থেকে। পি.এইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড়যুগ সময় ধরে অধ্যাপনা করছেন। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু। এরপর দেশের বৃহত্তম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে শিক্ষকতা করেন দশ বছরেরও অধিক সময়। এছাড়াও খন্ড কালীন শিক্ষক হিসেবে পড়িয়েছেন-ড্যাফোডিল, গ্ৰীন, পিপলস্, ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কর্মরত আছেন-ইউনিভার্সিটি অফ স্কলার্স (আই ইউ এস) বনানীতে । মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ২০২২ সালে। দেশে ও বিদেশের বিখ্যাত জার্নালে তার ২৩টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে তার। ”আপনি খুঁজছেন চাকরী কিন্তু নিয়োগকর্তা খুঁজছেন কী?” এই নামে ২০০৮ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই। ছাত্রছাত্রী ও চাকরী প্রার্থীদের জন্য লেখা - ”সফলতার প্রথম পাঠ” পাঠক মহলে সমাধৃত হয় ব্যাপক ভাবে। তার লেখা সেলস এন্ড মার্কেটিং নিয়ে "ইঁদুরের পকেট মানি", পিছিয়ে পড়া ও হতাশাগ্রস্ত ছাত্র-ছাত্রী জন্য লেখা "সফলতার দ্বিতীয় পাঠ- চাবুক", এবং একুশে গ্রন্থমেলা- ২০২০ এ প্রকাশিত আত্ম-উন্নয়ন মুলক বই-"কিংবদন্তীর নীরব ধন" পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাঁর লেখা "লাবনী পয়েন্ট" ও "উপেক্ষা" ছোট গল্পগ্রন্থ দুইটিও নজর কেড়েছে সুধী মহলের। তাঁর লেখা উপন্যাস "অভিশাপের" জন্য পেয়েছেন মাদার তেরেসা গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড ২০২০ এবং সাহিত্য বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন "মিডিয়া জার্নালিস্ট ফোরাম অ্যাওয়ার্ড ২০১৯"। ২০২৩ বই মেলায় প্রকাশিত হয় গল্প সংকলন "লোভ"। তিনি একজন সফট স্কিল এবং সেলস ট্রেইনার হিসেবে দেশ এবং দেশের বাইরে পরিচিতি পেয়েছেন ব্যাপকভাবে। শিক্ষকতার পাশাপাশি আত্ম-উন্নয়ন মূলক বই লিখে অল্প সময়ে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছেন লেখক ড. জে আলী।