কার্ডস অন দ্য টেবিল : কামরা ভরতি ব্রিজ খেলোয়াড়...অথচ তাদের চোখের সামনেই খুন হয়ে গেলেন চটকদার এক নিমন্ত্রাতা। মি. শাইতানা ফুর্তিবাজ হিসেবে বিখ্যাতই ছিলেন বলা যায়। সেই সঙ্গে এমন এক ব্যক্তিও, যাকে সবাই একটু হলেও ভয় পেত। তাই যখন পোয়ারোর সামনে বুক ফুলিয়ে বললেন: খুনকে তিনি শিল্প বলে ভাবেন, তখন শাইতানার ব্যক্তিগত সংগ্রহদের নিয়ে আয়োজিত পার্টিতে যোগ দিতে কুণ্ঠাই বোধ করছিলেন বেলজিয়ান গোয়েন্দা। হলোও তাই, ব্রিজ খেলা যে কখন আরও ভয়ানক...আরও প্রাণঘাতী খেলায় রূপ নিলো তা কেউ বলতে পারে না... বাই দ্য প্রিকিং অভ মাই থাম্বস: ফায়ারপ্লেসের পেছনে কবর দেওয়া হয়েছে এক বাচ্চাকে— এমনটাই দাবি করলেন এক বৃদ্ধা... টমি আর টাপেন্স যখন এক বয়স্কা আত্মীয়াকে দেখতে নার্সিং হোমে গেল, তখন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে বৃদ্ধার বলা হাজারো অভিযোগ কানেও তোলেনি। হাজার হলেও, মহিলা বড়োই খুনখুনে। কিন্তু যখন মিসেস লকেট বললেন বিষাক্ত মাশরুমের কথা, সেই সঙ্গে মিসেস ল্যাংকাস্টার যোগ করলেন ফায়ারপ্লেসের পেছনে কিছু একটা থাকার আখ্যান, তখন টমি-টাপেন্স নিজেদেরকে আবিষ্কার করল এমন এক রহস্যের মাঝে, যার জাল বুনে চলছে—কালো জাদু! দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি: সকাল সাতটা বাজে ঘড়িতে। ব্যানট্রিরা ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেল, লাইব্রেরিতে এক যুবতীর লাশ পড়ে আছে! পরনে তার সান্ধ্য-পোশাক, চেহারায় ভারী মেকআপ, যা এখন ছড়িয়ে আছে পুরো চেহারায়। প্রশ্ন হলো: কে এই মেয়ে? এখানে এলো কীভাবে? তার সঙ্গে আরেক মৃত মেয়েরই বা কী সম্পর্ক, যার লাশটা পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত এক জায়গায়? ব্যান্ট্রিরা তাই রক্ষে পেতে হাজির হলেন মিস মার্পলের সামনে, গুজব ছড়াতে শুরু করার আগেই এর একটা বিহিত করতেই হবে!
'দ্য কুইন অব ক্রাইম' ও 'দ্য কুইন অব মিস্ট্রি' নামে পরিচিত আগাথা ক্রিস্টি অপরাধ বিষয়ক বা রহস্য উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর পুরো নাম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা ক্রিস্টি৷ বিখ্যাত এই ইংরেজ লেখিকা সকল গোয়েন্দাগল্প ও রহস্যকাহিনী পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে। তিনি বেশ বিখ্যাত কিছু চরিত্রের স্রষ্টা, যাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল, যাদের নাম শোনা যায় গোয়েন্দাকাহিনী পাঠকদের মুখে মুখে। 'ম্যারি ওয়েস্টমাকট' ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এই প্রখ্যাত লেখিকা ১৮৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভন এ জন্মগ্রহণ করেন। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমূহ মূলত রোমাঞ্চ, হত্যারহস্য, অপরাধ ও গোয়েন্দাকাহিনী এবং রোমান্টিক ঘরানার। 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী আগাথা ক্রিস্টির বই বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে শুধু আরেক কিংবদন্তী সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকেই ধরা যায়। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমগ্র এর সংখ্যা প্রায় আশিটি। আগাথা ক্রিস্টি রচনাসমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার এট স্টাইলস, দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকর্ড, দ্য বিগ ফোর, দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ব্লু ট্রেন, পেরিল এট এন্ড হাউস, মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া, ডেথ অন দ্য নাইল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট উইথ ডেথ, এরকুল পোয়ারোজ ক্রিসমাস, স্যাড সাইপ্রাস, দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ, দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি, দ্য মুভিং ফিংগার, এ মার্ডার ইজ এনাউন্সড, দে ডু ইট উইথ মিররস, এ পকেট ফুল অফ রাই, ৪:৫০ ফ্রম প্যাডিংটন, নেমেসিস ইত্যাদি। আগাথা ক্রিস্টি সমগ্র এর মধ্যে আরো রয়েছে বিখ্যাত সব নাটক, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের নাটক 'দ্য মাউজট্র্যাপ'। আগাথা ক্রিস্টি অনুবাদ বই এর সংখ্যাও অনেক, এমনকি ইউনেস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী তাঁর বইগুলো সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর বাংলা ভাষায় অনূদিত বইয়ের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অনূদিত আগাথা ক্রিস্টি বাংলা বই এর মধ্যে 'সিরিয়াল কিলার', 'গেম ওভার', 'পোয়েটিক জাস্টিস', 'খুনের তদন্ত', 'মার্ডার ইন মেসোপোটেমিয়া', 'থ্রি ব্লাইন্ড মাইস', 'এ বি সি মার্ডার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭১ সালে তিনি 'ডেম' উপস্থিতিতে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি আগাথা ক্রিস্টি ৮৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।