পরাক্রান্ত প্রহর বিলের ধারে শুকনো গোবর কুড়িয়ে ছেঁড়া বস্তায় পুরে বাড়ি আনার কাজটি এগারো বছরের তমিজকে প্রায়ই করতে হয়। আজ অন্তত তিন সপ্তাহ বাড়িতে প্রতিদিন চুলো জ্বলে না বলে তার কাজেও ভাটা পড়েছে। তবু সে অভ্যাসবশত বেশ খানিকটা বেলা হলে মন্টু আর ফেদুর সাথে ঘাড়ে চটের ময়লা বস্তাটা নিয়ে আজও যায় বিলের টেকে। হুমোদহ বিলের একদিকে কচ্ছপের পিঠের মতো অনেকটা উঁচু একটা সবুজ মাঠ। সেটাকেই সবাই বলে বিলের টেক। বর্ষার দিনে যখন চারদিক পানিতে তলিয়ে যায় তখন ওই টেকেই লোকে গরু—মোষ চরায়। দুতিন দিন বৃষ্টি না—হলে সেখানে গেলেই শুকনো গোবর মেলে সবচেয়ে বেশি। আরেকটা কারণে ওই বিলের ধারটা খুব টানে তমিজকে। বিশাল বিলের কালো জল জুড়ে হাজারে হাজার তারার মতো লাল শাপলা ফুটে থাকে। তমিজ বড়োদের মুখে এই বিল নিয়ে অনেক গল্প শুনছে। এখানে নাকি এক সাথে একুশটা বিলের জল মিলিত হয়েছে। বর্ষা এলে জলের মাতামাতি আর উদ্দাম ভঙ্গি দেখে মনে হয় জায়গাটা বিল নয়, কোনো প্রমত্তা নদীর মোহনা। লোকে বলে এই জায়গাটা নাকি কোনো এক প্রাগৈতিহাসিক বা প্রাক—মনুষ্য আমলে আসলে বিশাল কোনো নদীই ছিল। দুশ বছর আগে এখানে সুন্দরবনের ডোরাকাটা বাঘেরাও বিচরণ করত। কে না জানে পৃথিবীর জল—স্থল—অরণ্য কালে কালে কত বিচিত্র রূপ বদলায়, সেই বদলের সাথে মানুষ নিজেকে মানিয়ে নিয়েই জীবনকে টিকিয়ে রাখে, থমকে যেতে দেয় না। পরে লোকেরা নদীটার নাম দিয়েছে বেগবতী। সেই গতি পাল্টে সরে—যাওয়া শীর্ণ—রোগা বেগবতী দেখে কেউ এখন তাকে নদী বলেই চিনতে পারে না,
হাসান অরিন্দম পেশা: অ্যাধাপনা জন্ম: দেশস্বাধীনের কিছুকাল পর, ঝিনাইদহ শহর। কিশাের বয়সে ছড়া-কবিতা দিয়ে লেখা শুরু হলেও পরে মূলত গল্পকার-প্রাবন্ধিকরূপে পরিচিত হন। কথাসাহিত্য ও গবেষণানির্ভর প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রে আগ্রহী হাসান গল্প রচনাতেই সৃষ্টির যথার্থ আনন্দ খুঁজে পান। প্রথম ছােটগল্প প্রকাশ: হায়াৎ মামুদ সম্পাদিত প্রণােদনা পত্রিকায় ১৯৯৮ সালে। অন্যান্য বই: একজন মানুষের সম্ভাবনা (প্রবন্ধ, ২০০২), সত্যিকারের রাজকন্যার গল্প (অনুবাদ ২০০২), ক্রিকেট বিকেল ও একটি দোয়েল পাখি (কিশাের গল্প ২০০৬) বিদ্যাছায়াবিদ্যা ও অন্যান্য গল্প (ছােটগল্প, ২০০৭), আবুল মনসুর আহমদের আয়না : বিষয় ও শিল্পরূপ (সম্পাদনা, ২০০৮), কালােসাপের অথবা সাপের কালে কিংবা নীল (ওরফে বু) গল্প (ছােটগল্প ২০১০), বচন-অরিন্দম (সূক্ত বচন শতক, ২০১৩)।