প্রিয় সবুজ বাতি পূজার ঘ্রাণ নাকে আসতেই, আমাদের বড়ো হওয়ার সময়ের কথা মনে পরে। ঢাকের শব্দে, মনে পরে তোমাকে। তোমার জন্য রইলো পূজার শুভেচ্ছা। তাঁতীবাজারের যে বাড়িটাতে আমরা থাকতাম, তার দুটো বাড়ি পরেই থাকতে তোমরা। অদ্ভুত সুন্দর এক সময় কাটিয়ে বেড়ে উঠছিলাম আমরা। মাগরিবের আজানের ধ্বনির সাথে মিশে যেতো সন্ধ্যারতির ধূপের ঘ্রাণ! শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো কাটিয়ে আমি যখন যৌবনের দ্বারপ্রান্তে, তখন সমস্তটা পৃথিবী শুধু তুমিময়। বছর চারেকের বড়ো, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া 'তুমি' ছিলে আমার কাছে সমস্ত পুরুষ জাতির প্রতীক। আমার সকল প্রর্থনা ঘুরতো তোমাকে ঘিরে। আমার সকল প্রনতি এবং আরতি ছিলো তোমারই জন্য। তোমার প্রতি আমার আবেগ ছিলো সর্বগ্রাসী এবং সর্বনাশী। তোমার জন্য আমি জাতি, ধর্ম, পরিবার, পরিচয় --- সব ত্যাগ পারতাম। তুমি বুঝতে সবই। এড়িয়ে যেতে খুব সতর্কভাবে। ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস ছিলো না আমাদের ভালোবাসার। আর তাই, তুমি কখনোই আমাকে অলীক স্বপ্ন দেখাওনি। কলেজ শেষ করার পরপরই আমার বিয়ে হয়ে গেলো। বছরের ঠিক এই সময়টাতে, দুর্গা পূজার শেষে বিয়ের অনুষ্ঠান। তখনও বাতাসে এমনই শীতের আগমনী ঘ্রাণ ছিলো। মন্দিরে ছিলো ঢাকের শব্দ। আর, তোমার ছিলো বিসর্জনের প্রস্তুতি। আমার বিয়েতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করেছিলে তুমি। আতশবাজি জ্বালানো থেকে শুরু করে রং খেলা আর দুলহার জুতা চুরিতে তুমি ছিলে সবার আগে। আর আমি? তোমার জন্য ধারণ ক্ষমতার বাইরের ভালোবাসা বুকের ভিতর লুকিয়ে রেখে, সংসার করতে লাগলাম স্বামীর সাথে। দ্বিচারণি এক মন নিয়ে একাগ্রভাবে সংসার করছি, বাচ্চা পালছি, স্বামীর সেবা করছি! গোছানো জীবন আমার! শুধু, পূজার সময়টাতেই সব কেমন এলোমেলো লাগে। ধূপের ঘ্রান, ঢাকের শব্দ, আরতির ঘন্টাধ্বনী........ আমি ফিরে যাই আমার তাঁতীবাজারের জীবনে। মধ্য রাত পার হয়ে যাওয়ার অনেক পরে, তোমাকে জ্বলতে দেখে হঠাৎই মনে হলো, তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে।