দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস মানুষের হৃদয় থেকে মুছে যাওয়ার নয়। সে সময় কেবল হিটলারবাহিনী হত্যা করে পঞ্চাশ মিলিয়ন সৈন্য ও বেসামরিক জনতা। এদের মধ্যে নিরপরাধ সিন্টি ও জিপসি জনগণ ছিল পাঁচ লাখ । সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রাণ দিয়েছিল কুড়ি মিলিয়নেরও বেশি লোক । পোল্যান্ডে যুদ্ধাহতের সংখ্যা ছিল ছয় মিলিয়ন । এদের অধিকাংশ মৃত্যুবরণ করে নাৎসিবাহিনীর স্বেচ্ছাচারী খেয়াল চরিতার্থতার উল্লাসে । কিশোর এলি উইজেলও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্দি হন । তিনি দেখেছেন সেই নিষ্ঠুর অমানবিক যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে বাবা-মা-বোনের নির্মম মৃত্যু ৷ বন্দিশিবির থেকে ফিরে আসার পর উইজেল সেসব অভিজ্ঞতা লেখেন ‘নাইট' বইটিতে। অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোর বিষাদময়তায় ভরা, এই বইটিও তেমনি অবর্ণনীয় কষ্টের কাহিনি । গল্পের ঢঙে লেখক যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে সকরুণ ঘটনাবলি তুলে এনেছেন তা যেমন রোমহর্ষক, তেমনি হৃদয়বিদারক ।নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন এলি উইজেল । তার চেয়ে বড় হলো, এই গণহত্যার স্মৃতি আমাদের মানবিক বোধ জাগিয়ে তুলবে । এই বই নিষ্প্রদীপ অন্ধকারের ভেতর অনন্ত নক্ষত্রের মতো মানুষের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন । কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন । ফলে এই কাহিনি কেবল নাৎসি গণহত্যার স্মৃতি হিসেবেই আমাদের মন আর্দ্র করে তা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিকতা ধ্বংসের বিরুদ্ধে আত্মপ্রত্যয়ের দিশা দেয় ।