সমাজে আজ চারদিকে কেবলই হাহাকার ধ্বনি। অশান্তি আর কষ্টের ধোঁয়ায় আঁধার এ ধরণীতল। মারামারী, হানাহানি আর জাতিতে-অজাতিতে কোন্দলে পর্যুদস্ত মানবজীবন। সাম্য, উদারতা ও ক্ষমা এসব তো কবেই বিদায় নিয়েছে সমাজ থেকে। স্বার্থ আর সুবিধাভোগই হয়ে গেছে মানুষের মূল লক্ষ্য। সহযোগিতা, পরোপকারিতা ও উত্তম আচরণের আশা সুদূর পরাহত। চারদিকে জুলুম, অত্যাচার, অনাচার আর অশ্লীলতার চিত্র দৃশ্যমান। কোথাও নেই এক ফোঁটা শান্তির ছোঁয়া। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে মূলত সব দায়ভার আমাদেরই। আমরা যদি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান মেনে চলতাম, তাহলে এ দুনিয়াই হয়ে উঠতো আমাদের কাছে পুষ্পকানন। ইসলামের সব বিধান মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে একমাত্র শান্তির গ্যারান্টিÑ এ কথাটি সবাই স্বীকার করলেও অনেকেই জানে না, কীভাবে চলতে হবে ইসলামের পথে, কীভাবে আসতে হবে শান্তির পথে। পরিবেশের কুপ্রভাবে অনেকে ভুলের জগতে থাকলেও অন্তরের গভীর থেকে চায় সত্য ও আলোর পথে চলতে। তাই কবি এম এ ওয়াজেদ মুসলিমদের ঐতিহ্য কুরআন ও সালাফের আমলের আলোকে রচনা করেছেন প্রভাতের পুষ্পসুবাস কাব্য গ্রন্থ। কালের আবর্তে ইসলামী ঐতিহ্য প্রায় বিলীন হতে চলেছে। দিন বদলের পালাবর্তে কিছু কবি ইসলামিক ভাবধারার উজ্জীবিত হয়ে না ফোঁটা আলোর মধ্যে পাঠক মহলে পৌষ মাসের ভোরে আলো ফোঁটানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পুষ্পসুবাস ছড়াচ্ছে। তাই কালের নিয়মে পুরোনো কবিরা চলে য়ায়, আবার কালের নিয়মেই নতুন কবির আগমন ঘটে, তার জন্য পথ ছেড়ে দিতে হয়। কেননা, কবিরা মননধারায় সড়বাত হয়ে কবিতা সৃজন করে। কবিতার প্রয়োজনেই কবিরা আপন মনে বিশ্বভ্রমণে বের হয়। তারা তাদের কবিতায় আত্মচেতনা ও আত্ম প্রতিফলন ঘটায় মানুষের জীবনবোধের আয়নায়। আর এর ফলে লেখালেখির সরল উপাদানে কবি এম এ ওয়াজেদ তার প্রভাতের পুষ্পসুবাস কাব্যে ইসলামী সোনালি যুগের ভাবানুষঙ্গ তুলে ধরেছেন। ৮ প্রভাতের পুষ্পসুবাস তিনি তার কাব্যে প্রায় ৪০টি কবিতা সংযোজন করেছেন ইসলামী ভাবধারার আলোকে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ উম্মত জননী খাদিজা স্মরণে, আবু বকর তনয়া আয়েশা সমীপে, উম্মত জননী হাফসা বিনতে উমর স্মরণে, নবী তনয়া উম্মে কুলসুম স্মরণে, মুতার শহীদ যায়েদ ইবনে হারেসা স্মরণে, সাহাবী আবু দারদা সমীপে, সাহাবী সালমান ফারসী স্মরণে, সাহাবী আবু যার গিফারী, সাহাবী মিকদাদ ইবনে আমর স্মরণে, সিজদার স্বাদ, আল্লাহ আকবার, জাগো মুজাহিদ ফিলিস্তিন কাঁদে ইত্যাদি কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধের জাগরণ, ইসলামী ঐতিহ্য ও ইসলামী ভাবগাম্ভীর্যতাকে আরো প্রোজ্জ্বল করেছেন। এখানেই কবির সার্থ্যকতা, যা পাঠকের চিত্তে নাড়া দিবে ইনশাল্লাহ। পরিশেষে বলা যায়, হালের কবি এম এ ওয়াজেদ বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর কাব্য প্রতিভা। তাকে ইসলাম পূর্ণজাগরণের কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। তার লেখায় সব সময় ফুটে উঠেছে ইসলামী মূল্যবোধ, মানবতাবাদ, সত্য ও ন্যায়ের জয়গান। তাই, এ বার বই মেলায় ভুল না করে কবি এম এ ওয়াজেদের লেখা প্রভাতের পুষ্পসুবাস গ্রন্থটি হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরুন। মোহাঃ আব্দুল্লাহ