বাংলাদেশের চিত্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক যথার্থই বলেন, “বর্তমান সভ্যতার চাকা পশ্চাৎমুখি”। এর আলামত শুরু গত শতাব্দীর শুরুর দিকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক অভিঘাতে বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে উঠলেও মানবজাতির মনকে ততটা প্রভাবিত করেনি। বৌদ্ধিক ধারা তা বুঝতে পারলেও অপধারার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। তবে তারা প্রগতির চাকাকে সচল রাখতে মত ব্যক্ত করে যেতে থাকেন। বিশ্বসরকার ব্যবস্থা বিষয়ক চিন্তার সূত্রপাত এ ধারাতেই। বর্তমান সভ্যতা ইউরোপীয় রেনেসাঁসের দান। সভ্যতার ইতিহাসে এই রেনেসাঁসের শক্তির প্রভাব এতটাই প্রবলভাবে মানবজাতিকে প্রভাবিত করে যে, মানবজাতি তার দ্বারা একপ্রকার বিমোহিত। হয়ে পড়ে। ফলে রেনেসাঁসের গতি যে, সময়ের চাহিদায় একসময় শ্লথ হয়ে পড়তে পারে সেরকম বোধের সঞ্চার হয়নি। কোভিড-১৯ এর চরম আঘাত মানবজাতিকে হতচকিত করে। দেয়। প্রগতির চাকা চলহীন হয়ে পড়ার স্বাভাবিক পরিণতিতে মানুষের বিকাশশীলতা আটকে যায়। প্রকৃতির জগতে মানবজগৎ চলতে পারছে না। চারিদিকে নৈরাজ্যের পদধ্বনি। জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কোনো মতাদর্শ মানবজাতিকে আকর্ষণ করে না। মানুষের চিরায়ত স্বাভাবিক মানবিক গুণাবলি লোপ পেতে বসেছে। প্রকৃতির সঙ্গে অসম এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃতির জগতে অভিযত্নে তিল তিল সাধনার দ্বারা যে আপনজগত মানুষ তৈরি করে নিয়েছে সেই জগৎ এবং মানুষ নিজেই যেন বিলুপ্তির পথে ধাবমান। এরূপ বাস্তবতায় জীবন-জগৎ সম্পর্কে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু প্রশ্ন লেখকের মনকে তাড়িত করে। এই তাড়নার বশে রচিত লেখাগুলো গ্রন্থিত হয়েছে এই বইটিতে। উত্তর খুঁজে সমাধানের পথও বাতলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। লেখকের নিজের মতেই-প্রশ্নগুলো ততটা স্পষ্ট নয় এবং সমাধানের পথনির্দেশনা অপূর্ণ। তবে জাতীয় সরকার এবং তার সম্পূরক ফেডারেল বিশ্বসরকার প্রতিষ্ঠার যে ধারণা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলু হক তাঁর আটাশ দফা: আমাদের মুক্তি ও উন্নতির কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার করছেন এবং তা বাস্তবায়নে যে কাজ চলছে তার বাস্তবায়ন হলে সেই অপূর্ণতা পূর্ণতা পাবে বলে লেখকের আশা।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ১৯৫৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার শিমুলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম মকবুল হোসেন, মাতা মরহুমা আমেনা খাতুন । ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়, ভৈরব থেকে তিনি এস এস সি, ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৮৩ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পদক এবং কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বশীল পদে চাকুরি করেন। চাকুরি ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে ১৯৯৬ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে ১৭১ কিশোরগঞ্জ-৭ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) নির্বাচনী এলাকা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করেন। তাঁর চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । বিদ্যমান অসুস্থ রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। বর্তমানে তিনি দেশের প্রখ্যাত সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তক আটাশ দফা কর্মসূচির প্রণেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহম্মদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সঙ্গে কাজ করছেন। নিজ এলাকা নির্বিশেষে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রাজনীতি বিষয়ে অধ্যয়ন-গবেষণার পাশাপাশি আটাশ দফা কর্মসূচির আলোকে নতুন ধারার রাজনীতি গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজ এলাকায় তিনি ২০০৮ সালে গড়ে তুলেছেন রেবতীবর্মণ স্মৃতি সংসদ এবং ২০১০ সালে গড়ে তুলেছেন "বাংলাদেশ জাগরণী শান্তিসঙ্গ' নামক একটি সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাঁর চিন্তা ও কর্মের সাধনার মূলে রয়েছে বাঙালি, বাংলাদেশ এবং সর্বোপরি বিশ্বজনীন মানবতা।