অদ্ভুতরকমভাবে যাপনের আচরণ বাংলা কবিতায় লিপিত হয়েছে বহুকাল ধরেই। চিহ্নিত বাস্তবতায় এবং বাস্তব-উত্তীর্ণ সম্ভাব্য বাস্তবতায় পূর্ণ সেই যাপন। সেই যাপন কিভাবে প্রতিস্থাপিত হবে কবিতায় সেটা নির্ভর করে একজন কবি কতোটা আবহমানের বৃত্তস্রোতে থাকছেন আর কতোটা আবহমানের বাইরের মুক্তি চাইছেন। পরম্পরার প্রকৃতিতে সেতুবন্ধিত থেকেও ইহিতা এরিনের কবিতা আবহমানের বাইরে যাপিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাঁর কবিতা ছিন্নমূল নয়, সমাজ-মানস বহির্ভূত নয়, দৈব অনুগ্রহকেন্দ্রিক নয়, অসংহত নয়। যদিও কবিতার গঠনে হঠাৎ জাম্প আছে। অন্য মেরুতে চলে যাওয়া আছে। অদ্ভুতত্ত্বের মনস্তত্ত্বকে একবিংশের প্রজন্মের কবিরা অদ্ভুত ভাষাতেই প্রকাশাচ্ছেন। সেই অদ্ভুতত্ত্ব পূর্ববতী মনস্তত্ত্ব থেকে এই কারণেই আলাদা যে যাপনটাই প্রতিদিন খুঁজে পাচ্ছে নন-ফরমাল প্রকাশ। ইহিতা এরিনের 'যাপন' কবিতার প্রথম দুটো পংক্তিতে লক্ষ্য করছি অদ্ভুতত্ত্বের আচরণ--- 'আধ-খোলা বীভৎস চোখের পাতা নিয়ে হাঁটি/মাছির চোখ দেখতে দেখতে ভুলেছি নিজের চোখ।' স্বর্গ থেকে ব্যানিশড্ হওয়া পৌরাণিক লেডি লিলিথের অস্তিত্ব সংকট কল্পিত হয় ইহিতার ব্যাস ব্যাসার্ধে। পৌরাণিক লিলিথেরই আগুনপোড়াসন্ধ্যা, বিপন্ন পদাবলী, চৈত্রদাহ, লিলিথের সর্বনামের চিৎকার শুনি ইহিতার শোষিত কাব্যভাষায়। স্বর্গ থেকে বিচ্যুত সুন্দরী লিলিথ কি শুনেছিল একবিংশের ল্যাংড়া সমাজের হাহাহিহি-র ভীষণ শব্দ ? ধিকৃত লিলিথই হয়তো আজকের নারীদের রক্তপ্রবাহের কোথাও থেকে গেছে। সম্পর্ককে সর্বজনীন মিথ ভাবছেন ইহিতা। নিজেই যেন পৌরাণিক লিলিথের অস্তিত্ব ধারণ করে অতীতের নিষ্ঠুরতার সঙ্গে বর্তমানের সামাজিক-মানসিক সম্পর্কের মিল-অমিলের ভূগোলকে চিহ্নিত করছেন তাঁর কবিতায়।"